একপক্ষ: ধর্ম এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মাঝে জনগণের অবস্থান এখন কোথায়?
সলিমুল্লাহ খান: এটা কঠিন প্রশ্ন। আমার পক্ষে মাপা সম্ভব নয় কোথায় আছে। তবে যা দেখতে পাচ্ছি, ধর্ম হঠাৎ এখন একটা ইস্যু হয়ে উঠেছে। এটা হওয়ার আপাতদৃষ্টিতে কোন কারণ নাই। আসলে ঘটনাটা হয়েছে এভাবে, যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করার জন্য জামায়াতের হাতে কোন অস্ত্র ছিল না। সুতরাং তাদের একটা, আমি যেটা মনে করি, কৌশল দরকার ছিল। তার মধ্যে সেরা কৌশল হচ্ছে এসলাম ধর্ম অবমাননা হচ্ছে এই কথা বলা। এটা বললে দুটি লাভ হয়। এক জামায়াত নামক সংগঠনটির নামের সাথে ইসলাম আছে সুতরাং তারা যদি বলে জামায়াতকে নির্যাতন করা হচ্ছে না এসলামকে নির্যাতন করা হচ্ছে তাতে জনগণের কিছু হলেও সমবেদনা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ এদেশের বেশির ভাগ মানুষ এসলাম ধর্মাবলম্বী। দুই নম্বর হল, জামাত এই কথা বললে জনগণ সেটা পুরোপুরি বিশ্বাস করবে না, কারণ যুদ্ধাপরাধের সাথে তারা জড়িত এটা যেমন তারাও জানে, মানুষও জানে। তখন তারা দেখল কি আরেকটা নতুন ইস্যু তৈরি করা যেতে পারে কিনা। অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধের ইস্যুটাকে প্রধান আলোচ্য না করে যদি অন্য কোন বিষয়কে আলোচ্যসূচিতে পরিণত করা যায় তাহলে তাদের লাভ হচ্ছে তখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু অন্য জায়গায় সরে যাবে এবং সেইখানে যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবি করেছিল যেই তরুণেরা তারা নিজেরাই বিচারের মুখোমুখি হয়ে পড়বে। অর্থাৎ বাদিকে আসামিতে পরিণত করা। এটা একটা পুুরানো কৌশল, সেটুকু তারা সাধারণ জনগণের মাঝে ব্যবহার করেছে। এটুকু বলতেই হবে। অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধী বলে যারা অভিযুক্ত হয়েছে, যাদের বিচার চলছে তাদের বিচারের দাবিতে যে গণআন্দোলন সেই গণআন্দোলনকে মোকাবেলা করার জন্য আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ খাড়া করা দরকার, এবং সেক্ষেত্রে ধর্ম একটা মোক্ষম হাতিয়ার, এটুকু হচ্ছে ঘটনার অর্ধেক। সকল সত্যের মত এটুকুও সত্য, কিন্তু সত্য যদি আমরা পুরো না বলি তা অসত্যের চেয়েও মারাত্মক হয়। অর্ধসত্য অসত্যের চেয়েও মারাত্মক।
তাহলে ঘটনার বাকি অংশ কি? একটা অংশ হল, আমাদের দেশে সংস্কৃতি বলে যা বোঝায় তার মধ্যে ধর্ম একটা বিরাট ভূমিকা পালন করে। পাকিস্তান আমলেও দেখা গেছে বাংলাদেশের মানুষের আন্দোলনের ভিত্তি ছিল পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ এবং সেটা করতে হলে এখানকার জনগণের মধ্যে নানা রকমের লোক আছে তাদের সবার মধ্যে ঐক্য দরকার। সেজন্য পাকিস্তান বরাবরই চেষ্টা করেছে এই ঐক্যকে বিনষ্ট করার। আমাদের জনগণের মাঝে যে ঐক্যের অভাব এই জায়গা থেকেই গণ্ডগোল দেখা দিয়েছে যে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে তখন থেকেই ক্রমশ ধনীক শ্রেণির সরকারে পরিণত হয়েছে এবং এর ফলে তারা তাদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য নানাবিধ কর্মসূচি নিয়েছে এবং নির্বাচন যতই সামনে আসছে — এখানেই আমাদের জিজ্ঞাসা করা দরকার যে যুদ্ধাপরাধের বিচার তারা এত দেরি করে শুরু করল কেন? কারণ নির্বাচন একটা ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সরকার চাইছেন তারা আরেকবার ক্ষমতায় আসবেন তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে যে তরুণেরা সোচ্চার হয়েছেন — এই সরকার তাদেরকে কৌশলগতভাবে সমর্থন করেছে। যদিও অনেকে বলছে সরকার এটা সংগঠিত করেছে, তবে আমি এটা সত্য বলে মনে করি না। সরকার এদের সমর্থন দিয়ে এদের দাবি আনুসারে ট্রাইবুনালের আইন সংশোধন করেছে। তো যুদ্ধাপরাধের শক্তি তখন অভিযোগটা শুধুমাত্র আন্দোলনকারীদের দিকে না করে সরকারের বিরুদ্ধে করেছে — এই সরকার নাস্তিকদের সরকার।
ধর্ম জিনিশটা রাজনৈতিক অংশ হিশাবে এসেছে। কিন্তু জনগণের মাঝে তো ধর্মের একটা ঐতিহাসিক ভূমিকা আছে। অতয়েব ধর্ম জিনিশটাকে এক বাক্যে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। যেমন এই দেশের লোকের ভাষা, পোশাক-পরিচ্ছেদ, পরিচয়ের মধ্যে দেশটা যেহেতু বাংলাদেশ সেই জন্য আমরা বলি বাঙ্গালি সংস্কৃতি। কিন্তু বাঙ্গালি সংস্কৃতিটা কি? এক্ষেত্রে ইতিহাসের দিক থেকে কিছু অমীমাংসিত সমস্যা আছে। এখানে কিছু কিছু লোকের বিশেষ করে আধুনিক কালে যারা মিডিয়া চালায় তাদের মধ্যে এই প্রবণতা রয়েছে যা কিছু এসলামের সাথে সম্পর্কিত তাকে নিন্দা করা, এটা মিথ্যা বা অলীক নয়। এসলামি সংস্কৃতিকে ছোট করা অর্থাৎ এসলাম বাংলার শত্র“ এরকম মনে করা, প্রচার করা পাকিস্তানের যে যুদ্ধকৌশল ছিল ঠিক তার বিপরীত। এটা ঐতিহাসিক সত্য। এক সময় এই উপমহাদেশে বাঙ্গালি বলতে কেবল হিন্দু মনে করা হত। কিন্তু বাঙ্গালি মুসলমান যখন তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝতে পারল যে তারাও বাঙ্গালি তখন বাঙ্গালি শব্দের সংজ্ঞা একটু বদলাল। অর্থাৎ মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ তথা সব ঐতিহ্যের লোকই বাঙ্গালি হতে পারে। এই যে মনোভাব এটা বাংলাদেশের সব মহল এখনো মনে প্রাণে গ্রহণ করেনি। এই না করার ফলে তলে তলে একটা বিরোধ কাজ করে এবং সেটাকে সুবিধাজীবীরা পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগাচ্ছে। কাজেই এই দায় সত্যের খাতিরে বাঙ্গালি সংস্কৃতির তথাকথিত ধারক বাহক যারা আছেন তাদেরই নিতে হবে। যেমন ছায়ানট।
ছায়ানটে বাঙ্গালি সংস্কৃতির নামে যা করা হয় এটা প্রতিক্রিয়াশীলদের কাছে একটা উদাহরণ। বাঙ্গালি সংস্কৃতি বলতে কি বুঝব আমরা? নজরুল ইসলামকে ধরা যায়। নজরুল ইসলাম বাঙ্গালি কি বাঙ্গালি নন? যে কোন বিচারে নজরুল ইসলাম বাঙ্গালি। নজরুল ইসলাম আবার বাঙ্গালি মুসলমানও, তিনি প্রচুর এসলামি সঙ্গীত লিখেছেন। তো নজরুল ইসলামকে কি এসলামি সঙ্গীত লেখার দায়ে অবাঙ্গালি বলা যাবে? এটা বলা যাবে না। অতয়েব এসলামি সঙ্গীত যে বাংলা সঙ্গীত হতে পারে, এসলামি সংস্কৃতিও যে বাঙ্গালি সংস্কৃতির অংশ হতে পারে এটার পূর্ণ স্বীকৃতি থাকা উচিত ছিল। কিন্তু সেটা দুর্ভাগ্যক্রমে নেই। যারা ধর্মীয় আন্দোলন করছে এটা তাদের একমাত্র বৈধ ভিত্তি। যদিও নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি বলা হয় তবু আমাদের দেশে নজরুল ইসলাম এখনো অবহেলিত। উদাহরণ আমাদের টিভি অনুষ্ঠান যেগুলো আছে সেগুলোতে নজরুল ইসলামকে কি পরিমাণে পাত্তা দেওয়া হয়? রবীন্দ্রনাথের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যা করা হল নজরুলকে নিয়ে তার ১০ ভাগের এক ভাগও কি করা হয়েছে কখনো? তাহলে ব্যাকল্যাশ হবেই কারণ বাঙ্গালি মুসলমান নজরুল ইসলামকে যেভাবে চিহ্নিত করেন এটার জন্য জামায়াতে ইসলাম বা হেফজতে ইসলাম হবার দরকার নাই। আমি সেই সমস্ত মুসলমানদের কথাই বলছি যারা জামায়াতে ইসলাম করে না, যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল তারাও নজরুলকে ভালবাসে এবং নজরুল ইসলামে ভাল না বাসা হিন্দুদেরও উচিত নয়। কিন্তু মুসলমানের মধ্যে যারা এক সময় বঞ্চিত ছিল বলে মনে করা হয়, তাদেরকে একটা সম্মানজনক জায়গায় এনে দিয়েছেন নজরুল ইসলাম। তাই এই ইতিহাসটা ভুললে চলবে না।
আমি বলব হেফাজতে ইসলাম বা ঐ জাতীয় অন্দোলন যারা করেন তারাও নজরুলের ভক্ত নন। তাদের মতন লোকেরাই নজরুল ইসলামকে এক সময় কাফের বলেছিল সেটাও আমরা জানি। তারপরও বলব সাধারণ মধ্যবিত্ত মুসলমান যারা বাংলাদেশে এখন উল্লেখযোগ্য তাদের হৃদয়ে নজরুল ইসলামের জায়গা আছে, তাদের হৃদয়ে জসীম উদ্দীনের জায়গা আছে, তাদের হৃদয়ে আব্বাস উদ্দীন, জয়নুলের জায়গাও আছে। তাদের হৃদয়ে কার জায়গা নেই? যেমন নজরুল সঙ্গীত গায় ফিরোজা বেগম তার জায়গাও আছে। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান সংস্কৃতির যারা ধারক বাহক, মিডিয়া বা পত্রিকার মালিক — যেমন প্রথম আলোর কথা বলা যায় — সেখানে রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলকে নিয়ে যা করছে তার মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায় তারা নজরুলকে নিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে না বললেই চলে। যদি দুটির মধ্যে তুলনা করা হয় তবে বিষয়টা অরুচিকর শুনাবে। কিন্তু তুলনাটা মানুষ করে। এজন্য আমাদের সমস্যা গোঁড়াটা দেখতে হবে। যদি জামায়াতে ইসলামের লোকেরা বাংলাদেশে একলা আন্দোলন করত তাহলে কেউ শুনত না। জামায়াতে ইসলাম বিএনপির সাথে ভিড়েছে, বিএনপি হেফাজতে ইসলাম যে দাবি দিয়েছে তাকে কৌশলে সমর্থন দিয়েছে। এভাবে একটা ব্লক গড়ে উঠেছে। এটাকে একটা ঐতিহাসিক ব্লক বলা যেতে পারে। এই ব্লকটার কোনই যদি যৌক্তিকতা না থাকত তবে তা এগিয়ে আসতে পারত না। এজন্য আমি দুই দিকের কথাই বললাম। অর্থাৎ শাহবাগের আন্দোলনকে ধ্বংস করার জন্য এই দাবিগুলাকে তোলা হয়েছে এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত। শাহবাগ আন্দোলন গড়ে উঠেছে ৫ ফেব্র“য়ারি থেকে, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা প্রণীত হয়েছে ৯ মার্চ, ঢাকা মহাসমাবেশ হয়েছে ৬ এপ্রিল, এই তিনটা তারিখ তুলনা করলে তা বোঝা যায়। হেফাজতে ইসলাম তৈরি হয়েছে ২০০৯ কি ২০১০ সালে কিন্তু তার সম্বন্ধে লোকজন খুব কমই জানত। শাহবাগের আন্দোলন যখন দানা বাধল তখন তারা নাস্তিক ব্লগার আবিষ্কার করল। এই আবিষ্কারের ক্ষেত্রে কিছু কিছু সংবাদপত্র, যেমন মাহমুদুর রহমানের ‘আমার দেশ’ একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। রাজনৈতিকভাবে জনগণের অবস্থা নির্ণয়ের জন্য সবকিছু একসাথে আলোচনা করেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে আমি মনে করি।
একপক্ষ: আমাদের দেশের রাজনীতিবিদেরাও তো ধর্ম নিয়ে রাজনীতিতে আগ্রহী।
সলিমুল্লাহ খান: এই ধারা থেকে বের হয়ে তারা কোথায় যাবে? ফরাশি বিপ্লবের কথা বলা যায় — সে সময়ে শ্লোগান উঠেছিল তিনটা। সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা। কিন্তু সে ফরাশিদেশেই সাম্য টেকে নাই, স্বাধীনতার নামে যা টিকেছে সেটাকে বলা যায় লিবারালিজম। কিন্তু সাম্যবিহীন এই স্বাধীনতা পরিণত হয় ফ্যাসিবাদে। সেটাই হয়েছে এয়ুরোপে। এইদিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল সেগুলিও তো পূরণ হয়নি। বাংলাদেশের অফিসিয়াল প্রতিশ্র“তি ছিল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা। জাতীয়তাবাদ পরে যুক্ত হয়েছে। জাতীয়তাবাদ কোন অন্যায় কিছু না, কিন্তু জাতীয়তাবাদকে গুরুত্ব দেওয়ার মধ্যে একটা সূক্ষ্ম কৌশল আছে। আওয়ামী লীগ জাতীয়তাবাদ পছন্দ করে, বিএনপিও জাতীয়তাবাদ পছন্দ করে। কিন্তু এক সময় কৃত্রিম তর্ক উঠেছিল বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ না বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ? বাংলাদেশের সবলোকই তো বাংলাদেশি, চাকমারাও বাংলাদেশি হতে পারে, মারমারাও বাংলাদেশি হতে পারে। কিন্তু শুধু বাঙ্গালি বললে তো তারা বঞ্চিত হয়। আওয়ামী লীগ সেটা পরে হলেও বুঝতে পেরেছে যে কথাটা বাংলাদেশিই হওয়া উচিত। আবার এটা বললে আপনি বিএনপি হয়ে যাবেন এই ভয়ে এটা আর তারা বলে না।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ এসব বিভেদের অনেক উপরে। এটা বাংলাদেশের একটা রাজনৈতিক মূলধন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় ঘটনা আর ঘটেনি। এই যুদ্ধ ছিল একটা ধর্মনিরপেক্ষ ঘটনা। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলেই একসাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। তখনো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে এসলামকে ব্যবহার করার চেষ্টা হয়েছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এদেশে হত্যা, খুন, গণধর্ষণ করেছে এসলামের নামে। কাজেই এই জায়গা থেকে অনেকে এখন মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ এসলামের বিরুদ্ধেও হয়েছিল। কিন্তু সত্য হল, এসলামের বিরুদ্ধে নয়, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। তাই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই দেশ স্বাধীন হবার পর কেউ কেউ মনে করেছিল এসলামের দরকার নেই — যেমনটা পাকিস্তানিরা বলেছিল বাংলাদেশ হলে এসলাম থাকবে না। এই দুই ধারণাই ভুল ছিল। বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ সংস্কৃতি যদি বাঙ্গালির হয়, তাহলে মাঝখানের ৮০০ বছরের সংস্কৃতি কেন আমাদের হবে না? সেটা আমাদের নয় এই বলা… মানে, যেমন মৌলবি সাহেবেরা বললেন মেয়েরা মাথায় হিজাব পরবেন। কিন্তু বাঙ্গালি মায়েরা বললেন তারা মাথায় সিঁদুর পরবেন, এই সিঁদুর পরা কোন হিন্দু ব্যাপার নয় এটা বাঙ্গালি সংস্কৃতি। এরকম অনেক সাংস্কৃতিক বিষয়ে আমাদের তর্ক আছে। যেমন আমরা জানি এসলাম মূর্তিপূজা পছন্দ করে না। কিন্তু বাংলাদেশের সবগুলো ধর্মনিরপেক্ষ দিন যেমন ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ, ২১ ফেব্র“য়ারি এমনকি খোদ পাকিস্তানের ১৪ আগস্ট তো ধর্মনিরপেক্ষ দিন। এগুলো এসলামনির্ভর ছিল না, এসব সংস্কৃতি নির্ভর। এসলাম নির্ভর দিনও এখানে আছে: দুই ঈদের দিন, মহররমের দিন। আমরা ঈদে মিলাদুন্নবী করি। কিন্তু এগুলো নিয়ে কোন বিরোধ হয়না। কাজেই একই সাথে আমাদের দেশে যারা ধর্ম করে তারা ধর্মনিরপেক্ষ উৎসবও করে। পহেলা বৈশাখ একটা ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব। পহেলা বৈশাখ তো বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার আগে থেকেই আছে। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর বা ২৬ মার্চ তো বাংলাদেশ সৃষ্টি হবার আগে ছিল না। এই কথাগুলো যদি মনে রাখি তাহলে বুঝা যাবে এদেশের মানুষের অদ্ভুত ক্ষমতা আছে ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং ধর্মনিরপেক্ষতা দুটিকেই সংস্কৃতির অংশ করে উদযাপনের।
যেসকল অতি উৎসাহী বাঙ্গালি সংস্কৃতিবিদ এসলামের সাথে সম্পর্কিত সবকিছুকে বাঙ্গালি সংস্কৃতির বহির্ভূত বলার চেষ্টা করেছেন তারা যে ঐতিহাসিকভাবে ভুল করেছেন তার প্রায়শ্চিত্ত এখন আমাদের করতে হচ্ছে। এই জন্য রাজনীতিতে ধর্মকে নিয়ে আসা সহজ হচ্ছে। যদি বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রের কর্ণধাররা এসলাম ও অন্যান্য ধর্মকে সমানভাবে মর্যাদা দেন তাহলে এসলাম নিয়ে রাজনীতির সুযোগটা কমে যায়। এসলামকে সমান সুযোগ কোন যুক্তিতে দেয়া হবে না? আমাদেরকে একটা সোজা চিন্তায় আসতে হবে, এসলাম বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ কি অংশ নয়? আমি রাষ্ট্রের কথা বলছি না। সাংস্কৃতিক অবহেলার থেকেই হেফাজতের মত দলগুলো উঠে আসছে, রাষ্ট্র ধর্ম হিশাবে এসলামকে শক্তিশালী করার চেষ্টায় হেফাজতে ইসলাম যে ১৩ দফা দিয়েছে তাকে আমি সমর্থন করছি না। জেনারেল এরশাদ এই অন্যায়টা করেছেন। তিনি রাজনীতিতে ধর্মকে টেনে এনেছেন। সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম হিশাবে এসলামকে ডেকে আনার কোন দরকার ছিল না। এতে এসলামের মানমর্যাদা বাড়ে নাই। এরশাদ নিজেও যে ধার্মিক মুসলমান তাও নয়। এটা রাজনৈতিক কারণে করা হয়েছে। জেনারেল জিয়া তার আগে সংবিধানের গোঁড়ায় মূল প্রস্তাবনা পরিবর্তন করেছেন — ওটা নিয়ে এখন তর্ক হচ্ছে — সেটারও দরকার ছিল না। ১৯৭২ সালের সংবিধানটা এদিক থেকে আদর্শ ছিল। এই সংবিধানকে দুই সামরিক শাসক জিয়া এবং এরশাদ লঙ্ঘন করেছেন। সংবিধানের মূলনীতি তারা লঙ্ঘন করেছেন। এখনো সেটাকে আমরা সংশোধন করতে পারিনি, আওয়ামী লীগ সেটাকে অর্ধেক সংশোধন করেছে পুরাটা করতে পারেনি। এটা আমাদের পরাজয়।
এই পরাজয়ের কারণ আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক ব্যর্থতা। মুক্তিযুদ্ধের পর আওয়ামী লীগ সাড়ে তিন বছর দেশ শাসন করার পর একটা সামরিক অভ্যুত্থানের কাছে পরাজিত হল কেন? আমরা জানি যারা অভ্যুত্থান করেছে তারা অবৈধ, দীর্ঘদিন পরে হলেও তাদের বিচার হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস একটা অসমাপ্ত প্রশ্ন রেখে গেছে: কেন আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের ভিতর ক্ষমতা হারাল? অভ্যুত্থানকারী মেজরদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিরোধ হল না কেন? ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যে বাঙ্গালি লড়েছে সেই বাঙ্গালি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শ দুয়েক উচ্ছৃঙ্খল সৈন্যের বিরুদ্ধে লড়তে ব্যর্থ হল কেন? তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীরা পালিয়ে ভারত চলে গেলেন আর অন্যসব বীরেরা ঐ সামরিক বাহিনীর পিছনে লাইন দিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীরাই শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর সরকার গঠন করেছে। শুধু খন্দকার মোশতাক কেন, অন্যদেরও তো একই অবস্থা ছিল। তার মানে হচ্ছে এই সাড়ে তিন বছরের ভিতর আওয়ামী লীগ দেশে তার সমস্ত বৈধতা হারিয়েছিল। না হলে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা কোন প্রতিরোধের চেষ্টা করলেন না কেন। এটা প্রমাণ করে এই সাড়ে তিন বছর যে শাসন সেটা জনগণের কাছ থেকে তাদের অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। আমরা বর্তমানে সেই অবস্থায় গিয়ে পৌঁছাইনি; এখন কিছুটা হলেও গণতান্ত্রিকভাবে শাসন হচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের জনসমর্থন যে অনেকখানি কমেছে এ কথা মিথ্যা নয়।
এই সুযোগটা বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত পূর্ণমাত্রায় নিচ্ছে এবং আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করার উপায় হিশাবে ধর্মকে তারা এখন দুধারী তলোয়ার করে ব্যবহার করছে। আওয়ামী লীগের কাছের এবং দূরের সব মিত্রকে — যেমন কমিউনিস্ট পার্টি বা সরকারে যে কমিউনিস্টরা আছেন তাদের — লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে নৌকায় নাস্তিকেরা উঠেছে। একই সাথে তারা আওয়ামী লীগকে দুর্বল করছে আরেক দিকে জনগণের মাঝে নিজেদেরকে এসলামের চ্যাম্পিয়ন হিশাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। শেখ সাহেব অনেক বুদ্ধিমান ছিলেন এবং মেয়েও কম বুদ্ধিমান নন। আমি তাদের ব্যক্তিগত সমালোচনা করছি না, কিন্তু আওয়ামী লীগ গোটাভাবে দেখলে এই গত চার বছর আগে যে সমর্থন নিয়ে এসেছিল এখন সেইখানে দাঁড়ালে তারা টিকবেন কিনা আমার সন্দেহ আছে। আওয়ামী লীগের এই জনপ্রিয়তা হ্রাস কিছু পরিমাণে হলেও এদেরকে উৎসাহিত করেছে। জামায়াতের শক্তির দিকে তাকালে সেটা পরিষ্কার হয়। দেশের গ্রামে গ্রামে, চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে ফটিকছড়ি পর্যন্ত, চার কোণায় তাদের এত শক্তি কোথা থেকে আসল? কখন কোন অবস্থা হলে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই তাদের কর্মীদের পিটিয়ে মারা যায়? এই কর্মীদের রক্ষা করার জন্য জনগণ এগিয়ে এল না কেন? এর থেকেও বোঝা যায় সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে।
একপক্ষ: সংবাদ থেকে সাহিত্যে পর্যন্ত শাহবাগ নিয়ে নানা অপপ্রচার আমরা দেখতে পাচ্ছি। হাসনাত আবদুল হাইয়ের গল্প নিয়ে আপনার কি মন্তব্য?
সলিমুল্লাহ খান: সমাজে শাহবাগ যেহেতু প্রভাব ফেলেছে, সেহেতু শাহবাগ নিয়ে তো তর্কবিতর্ক হবেই। আমি মনে করি সেই বিতর্ক সহ্য করার মত সাহস আমাদের থাকা উচিত। যে গল্পটার কথা বলা হচ্ছে সেই গল্পটা খুব ভাল নয় এবং হাসনাত আবদুল হাই লেখক হিশাবেও তত সম্মানজনক নন। তার কোন লেখাকেই আমি শ্রদ্ধা নিয়ে দেখি না। এমনকি লোকে যেসব লেখার কথা বলে — সুলতান কিংবা নভেরা — সেগুলোও তৃতীয় শ্রেণির লেখা। এটা স্পষ্ট করে বলা যায়, হাসনাত আবদুল হাই একজন তৃতীয় শ্রেণির লেখক।
এখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন প্রথম আলো কি প্রথম শ্রেণির পত্রিকা কিনা। সার্কুলেশনের দিক থেকে প্রথম আলোকে লোকে প্রথম শ্রেণির পত্রিকা বলে। কিন্তু সাহিত্যমানের দিক থেকে এটিকে বড়জোর দ্বিতীয় শ্রেণির পত্রিকা বলা যেতে পারে। তার সাহিত্যমান ও বোধ ভাল নয়। পত্রিকার জঘন্যতম কাজটি হল এরা পছন্দের লেখকদের নিকৃষ্ট লেখা ছাপে। আবার ভাল লেখকদের লেখা তাদের পছন্দ নয় বলে ছাপে না। এটা সব পত্রিকাই করে, কিন্তু প্রথম আলো মাঝে মাঝে ধরাকে সরা জ্ঞান করে। কোন পত্রিকার সার্কুলেশন চার পাঁচ লাখ বলে যদি সে অখাদ্যকে খাদ্য বলে চালাতে চায় তবে সে একটা অপরাধই করে। প্রথম আলো সম্পর্কে বেশি কথা বলার সময় এখনো আসেনি। কিন্তু প্রথম আলো বিগত দশ বছরে আমাদের রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকা রেখেছে। তারা সামরিক শাসনকে সমর্থন করেছে কৌশলে এবং প্রকাশ্যে। বিশেষ করে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ড. মুহম্মদ ইউনূসের যে ভূমিকা প্রথম আলোর ভূমিকাও একই রকম। সেটাকে যদি আপনি ভাল মনে করেন তবে তারা ভাল ভূমিকা পালন করেছেন, আর খারাপ মনে করলে খারাপ ভূমিকা পালন করেছেন। এখন তারা শাহবাগ আর শাপলা চত্বরের ঘটনাকে একই পর্যায়ে স্থাপন করে দেখতে চায়। প্রথম আলোর দৃষ্টিভঙ্গিটা এরকম যে দুটি একই বস্তু। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাদের কোন অঙ্গিকার নেই। যদিও তারা একাত্তরের চিঠি বের করেছে কিন্তু এটা একেবারেই তাদের ব্যবসা ছিল। সেজন্য প্রথম আলো সম্পর্কেও শ্রদ্ধার সঙ্গে আমি বেশি কিছু বলতে পারছি না। কিন্তু এ গল্পটা ছাপানো প্রথম আলো কি পরিকল্পনা করে করেছে না ভুলে করেছে তা একমাত্র আল্লাহই জানে। আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। এই গল্পটা না ছাপা হলেই ভাল হতে বলে আমি মনে করি।
একপক্ষ: শাহবাগ আন্দোলন থেকে ব্লগারদের গ্রেপ্তার বিষয়টা কিভাবে দেখছেন?
সলিমুল্লাহ খান: শাহবাগ আন্দোলন জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন। অনেকে বলছেন এটা সরকার সংগঠিত করেছে। কিন্তু আমি মনে করি এটা ঠিক নয়। এটা সংগঠিত করেছে মুক্তিযুদ্ধপন্থী ছেলেমেয়েরা। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কিছু সমর্থকও যেমন আছে তেমন সরকারের সমালোচনাকারীও আছে। এটা থাকাটাই তো স্বাভাবিক। পরে এর মধ্যে ছাত্রলীগের নেতারা এসেছে। সেটা আসার অধিকার তাদের আছে। এটা সরকার সৃষ্টি করেছে এই কথাটা ঠিক না। সরকার তাদের দাবির স্বীকৃতি দিয়েছেন। ট্রাইবুনালের আইন সংশোধন করে বলেছেন আপিল করা যাবে। আবার একই সাথে এটাও তো ঠিক যে সংবাদপত্র বা ব্লগের স্বাধীনতা মানে তো স্বেচ্ছাচারিতা নয়। যে কোন ধর্মকে নিন্দা করাই নিন্দনীয় কাজ। সমালোচনা আর নিন্দা এক জিনিশ না। বর্তমান সময়টা খুব খারাপ। বাংলাদেশে এবং বিদেশে কিছু লোক ইচ্ছা করেই ধর্মের প্রতিষ্ঠাতাদের নামে, তাদের পবিত্র প্রতীকের নামে কুৎসামূলক রচনা প্রকাশ করছে। যেমন সালমান রুশদির মতন লেখক করেছেন। এদেরকে বলা হয় প্রবোকেটর বা উস্কানিদাতা। সরকারের উচিত ছিল এদেরকে কঠোরভাবে দমন করা। এখনো করা উচিত। এখন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে কেউ কেউ বলছেন আটক ব্লগারদের মুক্তি চাই। আমার কথা হচ্ছে ব্লগাররা যদি ব্লগ করে তাদের আটক করার দরকার নাই। কিন্তু যারা অভিযুক্ত তারা নির্দোষ প্রমাণিত হলে ছেড়ে দিতে হবে, দোষ করে থাকলে তার শাস্তি পেতে হবে। প্রথম কথা হচ্ছে ব্যক্তিগতভাবে আমি দোষটা করেছি কিনা এটা সম্পূর্ণ বিচারাধীন বিষয়। যদি দোষ হয় তবে সবাইকে শাস্তি পেতে হবে। আমি রাজপুত্র বা পত্রিকার সম্পাদক বলে মুক্তি পাব না। ব্লগার যদি দোষ করে তাহলে এই দোষ আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানেরও। এবং আমি মনে করি উভয়কেই শাস্তির আওতায় আনা উচিত। আমাদের এই সৎসাহস না হলে এটা খারাপ প্রভাব ফেলবে। সমাজে সমালোচনা থাকবে না। সমাজকে বুঝতে হবে কোনটা সমালোচনা আর কোনটা কুৎসা। আমি মনে করি যারা কুৎসা রটনাকারী, অপপ্রচারকারী, উস্কানিদাতা, কোরান বা নবী-রাসুলের অবমাননাকারী — সোজা কথায় সমাজে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে — তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে দৃঢ় হতে হবে।
একপক্ষ: কিন্তু রাষ্ট্র তো মন্দির ও সংখ্যালঘুর উপর হামলার বিষয়ে নীরব…
সলিমুল্লাহ খান: সেটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু এই হামলা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থামানোর একটা অংশ। এটা পরিষ্কার। এটা জামায়াত-শিবির কৌশল হিশাবে করেছে। সে কারণে ‘নাস্তিক’ ব্লগারদের উপর হামলা আর সংখ্যালঘুদের উপর হামলা এক জিনিশ নয়। এই দেশে নাস্তিক শব্দটা নেতিবাচক হিসেবে ব্যবহৃত। তাদের অপরাধে মামলা করলেই হয়। কিন্তু সংখ্যালঘুরা তো কোন অপরাধ করেনি, তাই ঘটনার চোখ সরানোর জন্য এই কৌশল। রামুতে বৌদ্ধমন্দিরের উপর হামলা, তাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়া হল। তারা কি অপরাধ করেছিল? আক্রমণকারীরা কোরান অবমাননার অজুহাত দিয়েছিল। সেই জনপদের একজন এটা করেছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু এটা তো কোনভাবেই মেলানো যায় না যে একজনের অপরাধে সব বাড়িঘর, মন্দির পুড়িয়ে দিতে হবে। নাস্তিক ব্লগারদের ভিতর মুসলিম আছে তাহলে সমস্ত মুসলিম বাড়ি পুড়িয়ে দাও! তা তো করা হচ্ছে না, সেখানে শুধু নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যায় যারা এগুলো করছেন তারা রাজনৈতিকভাবে পরিপক্ব নন। এই সমস্ত প্রতিক্রিয়াশীলরা জনগণের মাঝে পাত্তা পাবে না।
একপক্ষ: রাষ্ট্র কিন্তু এই প্রতিক্রিয়াশীলদের সহানুভূতি দেখাচ্ছে। হেফাজতে ইসলামকে বিএনপি সক্রিয় সমর্থন দিয়েছে। অনেকে বলছেন এর পেছনে সরকার আছে।
সলিমুল্লাহ খান: আমি এটা বলতে পারব না। সরকার হেফাজতের সাথে আছে এমন কোন প্রত্যক্ষ প্রমাণ আমার কাছে নেই। আওয়ামী লীগের রাজনীতির কৌশল হিশাবে এটা হতে পারে তবে তা সম্পর্কে অনুমান করে বলা আমার কাজ নয়। এটা আওয়ামী লীগের কর্তাব্যক্তিরাই নির্ধারণ করবেন। তবে এটা ঠিক হেফাজতের ভোটের রাজনীতিতে আসলে আওয়ামী লীগেরই লাভ হবে। হেফাজত যদি রাজনীতিতে আসতে চায় তবে আপনি তো তাদেরকে বাধা দিতে পারেন না। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এদেশে এখনো বৈধ। সুতরাং সরকার তো তাদের নিষিদ্ধ করতে পারে না। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে ধর্মভিত্তিক দল হিশাবে নয়, যদি করতে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী দল হিশাবে, সন্ত্রাসবাদী দল হিশাবে অথবা নির্বাচন কমিশনের যে নিয়মাবলি সেটা মানছে না হিশাবে তাকে আপনি নিষেধাজ্ঞার ভিতরে আনতে পারেন। কিন্তু জামায়াতসহ কোন দলকে কেবল ধর্মভিত্তিক দল এই হিশাবে নিষিদ্ধ করতে পারেন না। সংবিধানে মতপ্রকাশের ও চিন্তার অধিকার সকল নাগরিককে দেওয়া হয়েছে। এবং কেউ যদি রাজনীতি ধর্মায়ন করে তাহলে আপনি তাকে বাধা দিতে পারেন না। তাহলে তো আপনাকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদকে নিষিদ্ধ করতে হবে। সেটা কি
আপনি করবেন? হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আর হেফাজতে ইসলামের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। দুইটিই সাম্প্রদায়িক দল। তবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কারও ঘরে আগুন দেয় নাই, তাদেরকে বলা যায় হেফাজতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্র্স্টিান ঐক্য পরিষদ। হেফাজতে মাইনরিটি। তাদের নিজেদেরকে রক্ষা করার আন্দোলন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ যখন নিজেদেরকে হেফাজত করার দাবি তোলে তখন আশঙ্কা দেখা দেয়। এটাকে আমরা সাম্প্রদায়িকতা বলি।
ভারতের হিন্দুদের আন্দোলন আর বাংলাদেশের হেফাজতের আন্দোলন একই ধরনের। সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে যখন সংখ্যাগুরু আন্দোলন করে তখন ফ্যাসিবাদ শুরু হয়। এবং এটা ফ্যাসিবাদের নিদর্শন। এয়ুরোপীয় শব্দটা এখানে প্রয়োগ করা সঠিক হবে কিনা জানি না তবে আচার আচরণ দেখে তাই মনে হচ্ছে। এখন আপনি বলতে পারেন সরকার এটা প্রশ্রয় দিচ্ছে কেন? সরকার তো ধর্মীয় দল নয়, সরকার সেকুলার দল। অর্থাৎ সরকারকে সব দিকে তাল মিলাতে হবে। সরকার যদি নিরপেক্ষ হয় তাহলে তাকে সব দিকে নিরপেক্ষ হতে হবে। সরকার তো নারী পুরুষের ক্ষেত্রেও নিরপেক্ষ হবে। আমাদের সরকার প্রধান নারী। তিনি নারী পক্ষপাত করলে তো আপনারা পুরুষরা বিদ্রোহ করবেন। সরকার প্রধান তো মুসলমান, তাহলে কি তিনি হিন্দুদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবেন? সরকার বাঙ্গালি হলে কি তিনি চাকমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবেন? তাহলে তাকে নারী পুরুষ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্র্স্টিান সবার প্রতি ন্যায়বিচার করতে হবে। এ না হলে প্রকৃতপক্ষে ন্যায়পরায়ণ সরকার হবে না। সেজন্য আমি বলব সরকারের রাজনীতি এক জিনিশ আর ন্যায়নীতি আরেক জিনিশ। সরকারের নীতি বলতে বুঝাচ্ছি সংবিধানের নীতি। সংবিধানের নীতির ভিতর আবার কিভাবে আমরা ক্ষমতায় আসব কিংবা যাব এসব নীতিও আছে। বর্তমান সরকার বর্তমানে যেখানে আছে সেখানে তারা হেফাজতকে প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে মনে করছেন আপনারা, আমি এটা মনে করি না। হেফাজত যদি রাজনীতি করতে চায় তবে তাকে বাধা দেওয়ার সাংবিধানিক অধিকার তো সরকারের নেই।
একপক্ষ: হেফাজতের শক্তির সবচেয়ে বড় অংশ হচ্ছে মাদ্রাসাকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা। সমাজে জারি থাকা এই শ্রেণিবিভাজিত শিক্ষা কি এইসব ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে শক্তিশালী করছে?
সলিমুল্লাহ খান: শিক্ষার তো নানা শ্রেণি আমাদের দেশে রয়েছে। আমাদের যে ইংরেজি মিডিয়াম শিক্ষা এটাও তো জাতীয় শিক্ষানীতিকে বিভাজিত করছে। সেই বিষয়ে তো আন্দোলন হচ্ছে না। কারণ আমরা মনে করি ইংরেজি শিক্ষা প্রগতিশীল, এটা জাতির উন্নতি করছে। কিন্তু ঢাকা শহরের বড় লোকদের সবগুলো কিন্টারগার্ডেন কেন ইংলিশ মিডিয়াম হয়েছে? সেই বিষয়ে কাউকে তো আন্দোলন করতে দেখছি না। মাদ্রাসার ছাত্ররা কথা বললেই কি আপত্তি করতে হয়? আসল কথা হচ্ছে কি আপনি তার রাজনীতি পছন্দ করছেন না। ইংরেজিওয়ালাদের রাজনীতি পছন্দ করছেন। কথা তো ছিল সবকিছু বাংলায় হবে, কি ধর্মীয় শিক্ষা কি প্রকৌশল শিক্ষা। আমি আগেই বলেছি আমাদের এখানে বাঙ্গালি সংস্কৃতির নামে যেটা প্রচারিত আছে সেটা বাঙ্গালিবিরোধী। এটা বাঙ্গালিকে দ্বিখণ্ডিত করছে। একইভাবে বলব এখনো ইংরেজি শিক্ষার নামে যা চলছে সেটা উচ্ছিষ্ট বিদেশি শিক্ষা। শিক্ষা এখন সম্পূর্ণ শ্রেণিবিভাজিত। এখন আমাদের দেশের অর্ধেক ছাত্রছাত্রী যারা স্কুল কলেজে পড়াশুনা করে তাদের বেশিরভাগই বাংলা মিডিয়ামে পড়ে। তাদের ২০ ভাগের একভাগও হবে না যারা ইংরেজি মিডিয়ামে পড়ে। কিন্তু বিপদ হল সংখ্যা দিয়ে নয় শক্তি দিয়ে ইংরেজি মিডিয়ামওয়ালারাই দেশটাকে শাসন করছে। কাজেই আপনি কোন নৈতিক যুক্তিতে বলবেন মাদ্রাসাওয়ালারা উর্দুতে পড়াবেন না? যদি একমুখী শিক্ষার প্রশ্ন ওঠে তাহলে ইংরেজিমাধ্যমে শিক্ষার বিষয়টিকেও প্রশ্ন করতে হবে। পাকিস্তান আমলে আন্দোলন ছিল বাংলার জন্য। আজকে সেই প্রতিশ্র“তি গেল কোথায়? সব বাঙ্গালি জাতীয়তাবদী চেতনার ধারকেরা এখন মুখ চুপ করে থাকেন। অথচ তাদের সব বাচ্চা ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশুনা করে। এই যে অসততা, এটা শুধু অসততা নয়, অবিমৃষ্যকারিতা। ভবিষ্যৎ দেখতে অপারগতা। এখন বিশাল গ্রামে যারা স্কুলের শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত তারা মাদ্রাসায় যায়। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষা হচ্ছে ট্রাডিশনাল শিক্ষা, ব্রিটিশ আসার আগে থেকে ছিল। ইংরেজরা আমাদের সমাজের পূর্ণ রূপান্তর করতে পারে নাই।
আমি আগেই বলেছি যে আমাদের স্বাধীনতার অনেকগুলো প্রতিশ্র“তি কোন সরকারই এখনো পূরণ করতে পারে নাই। সে মৈত্রী কিংবা সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে নাই। সে শুধু স্বাধীনতা ব্যবসা করেছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে শক্তি তা এখন এত কমে গিয়েছে কেন? কারণ আমরা মৈত্রীবন্ধনে গোটাকে জাতিকে বাঁধতে পারিনি। আমরা সাম্য দিতে পারিনি কৃষককে এবং শ্রমিককে। আমাদের সমাজ দিনকে দিন শোষণভিত্তিক ধনতান্ত্রিক সমাজ হচ্ছে। সেই ধনতান্ত্রিকতার মাঝেও সমাজে শিল্প-কলকারখানা থাকে। কিন্তু আমাদের তাও হচ্ছে না। আমরা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ক্রীড়নকে পরিণত হচ্ছি, দালাল হচ্ছি। এই অবস্থায় এর প্রতিকার কি? এ থেকে প্রতিকার তো মাদ্রাসা শিক্ষা নয়। মাদ্রাসা শিক্ষা হচ্ছে আমাদের পশ্চাদপদতার আরেকটা প্রকাশ মাত্র। কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষা যে আমাদের একমাত্র শত্র“ এটা মনে করলে চলবে না। আমাদের প্রধান শত্র“ হচ্ছে — আমি দুঃখের সঙ্গে বলছি — ইংরেজি মিডিয়াম শিক্ষা। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রতি প্রধান বাধা হচ্ছে ইংরেজি মিডিয়াম শিক্ষা ব্যবস্থা। সব শিক্ষা হওয়া উচিত বাংলা মিডিয়ামে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে বিশ্বায়নের নামে আমরা আমাদের সমাজকে সাম্রাজ্যবাদের হাতে তুলে দিয়েছি। আমাদের দেশ থেকে সামাজিকতা তুলে দিয়েছি। এখন আমরা কোন মুখে মাদ্রাসার সমালোচনা করি? মাদ্রাসা শিক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বর্তমান সিস্টেমটা ভালো না। আমাদেরকে তো তারা শত্র“ মনে করবেই কারণ আমরা ইংরেজি মিডিয়ামে শিক্ষিত লোক। তারপরও বলব একটা জাতীয় শিক্ষা নীতি লাগবে যেখানে এই বহুমুখী ও বহুভাষিক শিক্ষানীতি বাতিল করা হবে। বাতিল করা কথাটি বলা সহজ, করা সহজ নয়। ধীরে ধীরে এটির উন্নতি করতে হবে। আমি বলব যে বর্তমানে যে মাদ্রাসাগুলো আছে এগুলির উন্নতি করার জন্য কতকগুলি পদক্ষেপ নিতে হবে। আপনি ধর্ম শিক্ষাকে নিরুৎসাহিত করতে পারবেন না। যারা ধর্ম শিক্ষা নেওয়ার তারা তা নিবেই। কিন্তু ধর্ম শিক্ষার বাইরে যে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা সেটাকেও মাদ্রাসায় দিতে হবে। মাদ্রাসায় কেন আমরা চিকিৎসা শাস্ত্র চালু করব না? ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পাশ করে যদি আমি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারি, তাহলে মাদ্রাসা পাশ করে মেডিকেলে ভর্তির জন্য যে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজন তাও মাদ্রাসায় থাকতে হবে। এটাই আমি বলতে চাই মাদ্রাসার সিলেবাসকে পুনর্গঠন করে মেইন সিস্টেমের সাথে আনতে হবে।
হেফাজতরা বলছেন স্কুল কলেজ ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত সর্বত্র ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আমরা বিনয়ের সাথে বলতে পারি সমস্ত মাদ্রাসায় ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। দেশের ইতিহাস থাকতে হবে সেখানে। বাংলা ভাষা থাকতে হবে। এবং সবচেয়ে বড় কথা দেশের সমাজবিজ্ঞান থাকতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষাওয়ালাদের দাবি ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়ে। আসুন আমরা ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার কথা বলি, তাহলে দুই শিক্ষা ব্যবস্থা এক হয়ে যাবে। আমাদের দাবি হওয়া উচিত মাদ্রাসায় ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা দিতে হবে। বাধ্যতামূলক নয়, আমাদেরকে এ সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। মাদ্রাসার ছাত্ররা কেন বিজ্ঞান শিখবেন না, মাদ্রাসায় কেন বিজ্ঞান, বাণিজ্য, সাহিত্য, শিল্পকলা, সমাজ বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল প্রচলন করা হবে না। আমরা এখানে ফ্যাশন টেকনোলজি পড়াচ্ছি। আমরা কৃষি পড়াচ্ছি, কিন্তু সবাই তো আর কৃষি, ফ্যাশন নিয়ে পড়ছে না। তাহলে সবাই কেন ধর্ম নিয়ে পড়বে? যেমন যারা আইন বিশারদ তারা আইন নিয়ে পড়েন। ধর্ম শিক্ষা হচ্ছে উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা। যেমন চিকিৎসা, দর্শন, আইন, প্রকৌশল। সবাই তো আর সব বিষয়ে নিয়ে পড়বে না। অর্থাৎ দেশে একটা সমন্বিত শিক্ষানীতি থাকলে মাদ্রাসাগুলোকে জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যাবে। মাদ্রাসা শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের নেওয়া উচিত বলেই আমি মনে করি। কওমি মাদ্রাসাগুলো আমরা ফেলে রেখেছি। রাষ্ট্র সেগুলোর ব্যয় বহন করবে। সেগুলো এমপিওভুক্ত হবে। এটা আমাদের রাষ্ট্রের ব্যর্থতা নয়, কৃপণতা। রাষ্ট্র এত টাকা অপচয় করছে, এত জায়গায় টাকা দিচ্ছে, সেখানে মাদ্রাসাগুলো অবহেলিত এটা তো সত্য। সরকার মাদ্রাসার সাথে যা করছে সে তুলনায় মাদ্রাসার ছাত্ররা আমি মনে করি অনেক ভদ্র। ওরা দুর্ভাগ্যবশত আন্দোলনটা করতে জানে না। এজন্য ১৩ দফার মত পুরানো পশ্চাদপদ দাবি নিয়ে এসেছে। ওরা যদি অগ্রসর ছাত্রদের ১১ দফার মত দাবি নিয়ে আসত তাহলে আমি তাদেরকে সমর্থন করতাম। দুর্ভাগ্যজনক, তাদের ১৩ দফায় সমর্থন করার মত কিছু নেই। তাদের একটা দাবি আছে ধর্মকে অপমান না করা, কোন ধর্মকে অপমান করা যাবে না, মৌলবিদের অপমান করা যাবে না। কিন্তু তাদের অন্য দাবি নাস্তিকদের ফাঁসি দেওয়া, ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন প্রভৃতি সঠিক নয়।
একপক্ষ: সরকার কি যুদ্ধাপরাধীদের প্রকৃত বিচার এবং শাস্তি নিশ্চিত করতে পারবে?
সলিমুল্লাহ খান: এখন পর্যন্ত তো সরকার বলছে তারা করবে। তাদের উপর রাজনৈতিক চাপ আছে। তারপরও সরকার বলছে আমরা পিছিয়ে আসব না। এই যে পিছিয়ে আসব না বলছে এতে বোঝা যায় তারা পিছিয়ে আসলেও আসতে পারে। সরকার যে একটা চাপে আছে এটা স্পষ্ট। যেমন কিছুদিন আগে বলেছে সামরিক বাহিনী কোন হস্তক্ষেপ করবে না। এরকম প্রশ্ন কেন পত্রিকায় আসবে? তিন বাহিনীর প্রধান একত্রে বসে বিবৃতি দিয়ে বলেছে আমরা হস্তক্ষেপ করব না। তার মানে কারও মাঝে হস্তক্ষেপের আশা আছে বলেই জনমানুষের সন্দেহ দূর করার জন্য তারা এগুলো বলছে। তারা বললেই যে হস্তক্ষেপ করবে না এটা বিশ্বাস করা মানে বোকার স্বর্গে বসবাস করা। সরকার পিছিয়ে আসবে না বলছি মানে আমরা আশা করি তারা যেন না পিছিয়ে আসে। আমি সমর্থন করি পিছিয়ে না আসার জন্য।
সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে সলিমুল্লাহ খান বলিয়াছেন যুদ্ধাপরাধবিরোধী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবিনামা, মাদ্রাসা শিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে। ‘একপক্ষ’ পত্রিকার ১-১৫ মে তারিখের সংখ্যায় ছাপা হওয়া সাক্ষাৎকারটি লইয়াছেন মনোজিৎ মিত্র। এই স্থলে সামান্য পরিমার্জনা করিয়া তাহা পুনর্মুদ্রিত হইতেছে।