প্রবন্ধ

সত্যের মুখোশ: আহমদ ছফার ‘অপূর্ব বিচার’

Spread the love

আর আল্লাহ সোলায়মানকে বিপুল জ্ঞান ও নিখুঁত বুদ্ধি এবং সমুদ্রতীরের বালুকার ন্যায় অন্তরের উদারতা দিলেন। তাহাতে পূর্বদেশের সমস্ত লোকের জ্ঞান ও মিসরীয়দের যাবতীয় জ্ঞান হইতে সোলায়মানের অধিক জ্ঞান হইল। … আর দুনিয়ার যে সকল রাজা সোলায়মানের জ্ঞানের খবর শুনিয়াছিলেন, তাঁহাদের নিকট হইতে সর্বদেশীয় লোক সোলায়মানের জ্ঞানের কথা শুনিতে আসিত।

কিতাবুল মোকাদ্দস, নবীদের কিতাব, বাদশাহনামা (১): ৪: ২৯-৩৪ 

আহমদ ছফা ঢাকা শহরে পৌঁছিয়াছিলেন ইংরেজি ১৯৬২ সালের কোন এক অলক্ষ্য প্রহরে। পৌঁছিয়াছিলেন ‘লেখক’ হওয়ার লক্ষ্যে–বিশেষ ‘কবিতা লেখার ধনুকভাঙা পণ’ লইয়া। বেশিদিন না যাইতেই তাঁহার লক্ষ্য পূরণ হইয়াছিল। তবে স্বীকার করিতেই হয়, কবিতা লেখার পণটা একটুখানি টলিয়াই গিয়াছিল। ছাপার অক্ষরে দেখা তাঁহার প্রথম লেখা ছিল–কবিতা কিংবা ছড়া নয়–একটি গল্প। গল্পের নাম–‘অপূর্ব বিচার’। ইংরেজি ১৯৬৩ সালের জানুয়ারি মাসে তৎকালীন ‘ইসলামিক একাডেমী’ নামক প্রতিষ্ঠান হইতে প্রকাশিত মাসিক ‘সবুজ পাতা’ পত্রিকায় এই গল্পটি ছাপা হইয়াছিল। এই গল্পের পশ্চাৎ পশ্চাৎ, ‘প্রতিবেশী’ এবং ‘মহান প্রতিশোধ’ নামে আরও দুইটি গল্প একই বছর–যথাক্রমে এপ্রিল আর জুন সংখ্যায়–ছাপা হয়। এই গল্পগুলির কথা আহমদ ছফা একপ্রকার ভুলিয়াই গিয়াছিলেন। প্রমাণ ১৯৬৭ সালের যুবাপাঠ্য ‘নিহত নক্ষত্র’, কি ১৯৬৮ সালের কিশোরসুলভ ‘দোলো আমার কনকচাঁপা’–কোন গল্পগ্রন্থেই গল্প তিনটি তিনি গ্রহণ করেন নাই। অনেকদিন অনেকদিন পরে–জীবনের পড়ন্ত বেলায়–প্রথম গল্পটি ছাপার অভিজ্ঞতা সবিস্তার বর্ণনা করিয়াছিলেন তিনি। বর্ণনার মর্মানুসারে একদিন তিনি একটা হাতে লেখা পোস্টারাহুত হইয়া ঘড়িতে বিকাল চারিটা বাজিবার পাঁচ মিনিট আগে ইসলামিক একাডেমী মিলনায়তনে ঢুকিয়া পড়িলেন। আলোচনার বিষয়বস্তু: ‘ইসলামের দৃষ্টিতে সুবিচার’। অন্য অনেকের বক্তৃতা শোনার পর তাঁহার মনে হইল এ বিষয়ে তাঁহারও কিছু কথা আছে। তাই ডায়াসে উঠিয়া তিনি আট-দশ মিনিট কথা বলিয়া ফেলিলেন। বক্তৃতায় কাজ হইল। ‘সবুজ পাতা’ সম্পাদক শাহেদ আলী সাহেবও সেখানে হাজির-নাজির ছিলেন। আহমদ ছফার জবানে ঘটনাটা ছিল এইরকম: ‘ডায়াস থেকে যেই নেমে এসে চেয়ারে বসেছি, দোহারা চেহারার ফর্শাপানা এক ভদ্রলোক খুব নরম জবানে জানতে চাইলেন আমার নাম কি, নিবাস কোথায় এবং উপস্থিত কি করছি। আমি নাম জানালাম, নিবাসের কথাও বললাম। বললাম আমি ছাত্র হলেও লেখালেখি হল আমার আসল কাজ।’ (ছফা ২০১৮: ২০) আমন্ত্রণে নীরব বাসনা সরব হওয়ার একটা সুযোগ পাইল। শাহেদ আলী সাহেবের আমন্ত্রণে তিনি পরপর দুইটি ছড়া পাঠাইলেন। শেষ জীবনের স্মৃতিকথায় ছড়া দুইটির ভাগ্য বিষয়ে নীরব থাকাই শ্রেয়জ্ঞান করিয়াছেন আহমদ ছফা। তিনি আগেই বলিয়া রাখিয়াছিলেন: ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। ভর্তি হওয়াটা উপলক্ষ, আসল লক্ষ্য লেখক হওয়া। পত্রিকা অফিসগুলো চষে বেড়াচ্ছি। কোন মহাপুরুষের অনুমোদনলাভ আমার ভাগ্যে জোটেনি। তার চাইতেও কষ্টের কথা, বারবার আমার লেখা প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। দুঃখের কথাটা কারো কাছে খুলে বলার উপায় নেই। সাহিত্য সম্পাদক মহাশয়েরা অত আদর করে আমার খামগুলো খুলে দেখুন বা নাই দেখুন–চাই কি বাজে কাগজের ঝুড়িতে ছুঁড়ে দিন–এই অনাদর-অবহেলা হবু লেখকের ললাটলিখন। কিন্তু সে জিনিশটি যদি অন্যে জেনে যায় তাহলে নীরবে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার অগ্নিপরীক্ষাটি অন্য দশজনের হাসিঠাট্টার খোরাক হয়ে দাঁড়ায়।’ (ছফা ২০১৮: ১৯) সেকালের ইসলামিক একাডেমীতে তরুণদের সেমিনারটি পনের দিন পর পর বসিত। আহমদ ছফার জবানি অনুসারে, ছাত্র ইউনিয়নের সমর্থক ছিলেন তিনি। তথাপি ঐ সেমিনারে বক্তৃতা শুনিতে যাইতেন। এই আকর্ষণের একটি আলাদা কারণ বিভাগপূর্ব বঙ্গের প্রাদেশিক শাখা নিখিল ভারত মুসলিম লীগ নেতা আবুল হাশিম সাহেবের বক্তৃতা। জীবন-সায়াহ্নের নাতিদীর্ঘ স্মৃতিকথায় আহমদ ছফা লিখিতেছেন, ‘তাঁর চোখ দুটি অন্ধ ছিল। তবু কথা বলার সময় তাঁর নিথর চোখ দুটি থেকে একধরণের জ্যোতি বিকিরিত হত। আর হাশিম সাহেবের বাচনভঙ্গি এত অপূর্ব ছিল যে আমি একরকম তাঁর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম।’ এই সেমিনারে আসা-যাওয়ার এক পর্যায়ে, একদিন শাহেদ আলী সাহেব আহমদ ছফাকে একান্তে ডাকিয়া লইয়া বলিয়া দিলেন, তিনি বাচ্চাদের জন্যে গদ্যে কিছু লেখার চেষ্টা করিয়া দেখুন না। এই আহ্বানের গূঢ়ার্থ: কবিতার সহিত তাহাকে একটা সন্ধিস্থাপন করিতে হইবে। আহমদ ছফাও সাড়া দিয়াছিলেন সেই আহ্বানে। তিনি বয়ান করিতেছেন: “কবিতা লেখার ধনুকভাঙ্গা পণ থাকলেও ওনার কথাটা আমার মনে ধরল। বিষয় নির্বাচন করতে গিয়ে মস্ত সমস্যায় পড়ে গেলাম। অবশেষে আমার বাবার মুখে শোনা সোলায়মান পয়গম্বরের একটি কিসসা গল্পাকারে লিখে ‘সবুজ পাতা’ অফিসে পাঠিয়ে দিলাম। তারপর আর ওমুখো হইনি।” কিছুদিন পর দেখা গেল একদিন সলিমুল্লাহ হলের ঠিকানায় আহমদ ছফার নামে দুই কপি ‘সবুজ পাতা’ আসিয়াছে। আহমদ ছফার জবানিতে পড়িতেছি: “এখনো সবুজ রঙের মলাটটির কথা আমার মনে আছে। কাগজ দুটা নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ নিলাম। স্পন্দিতবক্ষে সূচিপত্র উল্টে দেখলাম আমার লেখা ‘অপূর্ব বিচার’ গল্পটি ছাপা হয়েছে। জীবনে এই প্রথম ছাপার অক্ষরে আমার নাম দেখলাম।” সেই যে দেখার শুরু হইল, ২০০১ সালের ২৮ জুলাই পর্যন্ত সে দেখার আর শেষ হয় নাই। আহমদ ছফার কথায়, শাহেদ আলী সাহেব ঐ লেখাটি ছাপিয়া তাঁহার জীবনের গতিপথ বাঁধিয়া দিয়াছিলেন। ঐ গল্পটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মিন্নাত আলী সাহেবের এতই পছন্দ হইয়াছিল যে গল্পটি তিনি নিজের হাতে সম্পাদিত অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্যবইয়ের অন্তর্ভুক্ত করিয়াছিলেন। দুঃখের মধ্যে, তিনি আহমদ ছফার জায়গায় নিজের মাত্র নামটি বসাইয়া দিতে ভুল করেন নাই। (আনোয়ার ২০১১: ৫)

 

কি ছিল আহমদ ছফার সেই ‘অপূর্ব বিচার’ গল্পে? গল্পটি তিনি প্রচলিত লোককাহিনীর কায়দায় শুরু করিয়াছেন: ‘সে বহু বহু জমানা আগের কথা। বাদশাহ এবং পয়গম্বর হযরত দাউদ (আ.)-এর জমানা।’ পুরাতত্ত্ববিশারদরা হিসাব কষিয়াছেন–সে হজরত ঈসা (আ.) সাহেবের কিছু কম এক হাজার বছর আগের কথা। গল্পের সার এই যে অধিক ক্ষুধা লাগায় রায়হান নামক বাদশাহি মহলের এক নফর অন্য এক নফরের কাছে একটি সিদ্ধ ডিম অর্থাৎ আণ্ডা ধারে কিনিয়া খাইয়াছিলেন। শর্ত ছিল বিক্রেতা যখন দাবি করিবেন রায়হান তখন সুদে-আসলে ডিমটার ন্যায্য দাম পরিশোধ করিবেন। তিন বছর পর একদিন লোকটা রায়হানের কাছে ডিমের দাম বাবদ সর্বমোট তিনশ টাকা দাবি করিলে রায়হান বেহুঁশ হইয়া গেলেন। লোকটি–বিশেষণ যাহার গল্পকারের ভাষায় ‘সুদখোর এবং হাড়কেপ্পুন’–হজরত দাউদের দরবারে নালিশ দায়ের করিল। বাদশাহ জানিতে চাহিলেন, একটা ডিমের দাম কিভাবে তিনশ টাকা হয়। জবাবে লোকটা তাহাই বলিলেন যাহা তিনি রায়হানকেও বলিয়াছিলেন: একটা আণ্ডা থেকে একটা বাচ্চা হইত। আর সে বাচ্চাটা বড় হইলে একশটা আণ্ডা দিত। একশটা আণ্ডা হইতে একশটা করিয়া বাচ্চা হইত। এমনি করে হিসাব করিলে–তিন বছরে কত হইত! সুদখোর লোকটা রায়হানের কাছে ভারি গলায় দাবি করিয়াছিলেন: আমার আণ্ডার দাম আসলে সুদে-আসলে ছয়শ’ টাকা। তবে তুমি একান্ত দোস্ত মানুষ কিনা, তাই তোমাকে সব দিতে হইবে না, তোমার কাছে অর্ধেকই চাহিতেছি। হজরত দাউদ (আ.) অগত্যা কি করেন–লোকটিকে তিনশ টাকাই বিক্রি দিলেন। দয়ার মধ্যে, পরিশোধের জন্য রায়হানকে তিনি ছয় মাস সময় মঞ্জুর করিলেন। এদিকে ডিক্রির ভারে নফর রায়হান তো কাঁদিতে কাঁদিতে একশেষ। পথিমধ্যে তিনি কাঁদিতেছেন দেখিয়া বাদশাহ্‌র বেটা সোলায়মানের কৌতূহল জাগিল। রায়হান শাহজাদার কাছে সমস্ত কাহিনী খুলিয়া বলিলেন। সোলায়মান বুদ্ধি দিলেন: ‘আগামীকাল শাহি ফৌজ যখন তোমার বাড়ির সামনে দিয়া যাইবে তুমি এক হাড়ি ভাত হাতে লইয়া ভিটামাটিতে ছড়াইতে থাকিবে।’ পরদিন বাদশাহি ফৌজ রাজপথে কুচকাওয়াজ করিয়া যাওয়ার সময় পথের বাঁকে দেখিতে পাইল একটি লোক ভিটামাটিতে ভাত ছড়াইতেছে। তাহাদের প্রশ্নের জওয়াবে রায়হান বলিয়া ফেলিলেন: ভাই, গরিব মানুষ, ধান ফুরাইয়া গিয়াছে, তাই সকাল সকাল ধান পাইব বলিয়া দুইটা ভাত ছিটাইতেছি। তাহাকে পাগল ঠাহর করিয়া ধরিয়া দরবারে লইয়া গেলেন সিপাহিরা। বাদশাহ পাগলকে পোঁছ করিলেন, ‘তুমি জমিতে ভাত ছড়াইতেছিলে কেন?’ শাহজাদার পূর্বনির্দেশ অনুসারে বুদ্ধিদাতা সোলায়মানের নাম প্রকাশ করিলেন রায়হান। সোলায়মানের ডাক পড়িল দরবারে। বাদশাহ গোস্সা হইয়া বলিলেন: শাহজাদা, সকলে তোমাকে বুদ্ধিমান বলিয়া থাকে, আর তুমি কিনা এই লোকটিকে ভাত ছড়াইতে বলিয়াছ? এই বুঝি তোমার বুদ্ধির পরিচয়? ভাত হইতে কখনও ধানের চারা গজায়? উত্তরে সোলায়মান খোদ বাদশাহকেই পাল্টা প্রশ্ন করিলেন: হুজুর, সিদ্ধ আণ্ডা হইতে যদি বাচ্চা হয় তো ভাত হইতে কেন ধানের চারা গজাইবে না? বাদশাহর হুঁশ হইল, তিনি ভুল করিয়াছেন। রায়হানের দণ্ড মওকুফ হইল। দরবারে বালক সোলায়মানের নামে ধন্য ধন্য ধ্বনি উঠিল। সকলেই বলিল, এহেন বিচার পূর্বে কখনও দেখা যায় নাই–এই বিচার অপূর্ব বিচার।

 

প্রবাদ আছে সোলায়মান যখন বাদশাহ হইলেন ততদিনে গোটা তিন হাজার প্রবাদ মুখস্থ জানিতেন আর তাঁহার গলায় এক হাজার পাঁচটি গজল বা গীত উঠিত। কিতাবুল মোকাদ্দস অর্থাৎ পবিত্র ধর্মপুস্তকে বাদশাহ-পয়গম্বর সোলায়মানের আর একটি অপূর্ব বিচার কাহিনী লিপিবদ্ধ হইয়াছে। সেই কাহিনীর পুনরাবৃত্তি করিয়া এই নিবন্ধের উপসংহার করিলাম। সেই সময়ে দুইটি স্ত্রীলোক–তাহারা বারবনিতা–বাদশাহ্‌র নিকটে আসিয়া তাঁহার সামনে দাঁড়াইল। একটি স্ত্রীলোক বলিল, হে আমার খোদাবন্দ, আমি ও এই স্ত্রীলোকটি উভয়ে এক ঘরে থাকি; এবং আমি উহার কাছে ঘরে থাকিয়া প্রসব করি। আমার প্রসবের পর তিন দিনের দিন এই স্ত্রীলোকটিও প্রসব করিল; তখন আমরা একত্র ছিলাম, ঘরে আমাদের সঙ্গে কোন লোক ছিল না, কেবল আমরা দুই জন ঘরে ছিলাম। আর রাত্রিতে এই স্ত্রীলোকটির সন্তানটি মরিয়া গেল, কারণ এ তাহার উপরে শয়ন করিয়াছিল। তাহাতে এ মধ্যরাত্রে উঠিয়া, যখন আপনার দাসী আমি নিদ্রিতা ছিলাম, তখন আমার পাশ হইতে আমার সন্তানটিকে লইয়া নিজের কোলে শোয়াইয়া রাখিল, এবং নিজের মরা সন্তানটিকে আমার কোলে শোয়াইয়া রাখিল। সকালে আমি নিজের সন্তানটিকে দুধ দিতে উঠিলাম, আর দেখ, মরা ছেলে; কিন্তু সকালে তাহার প্রতি ভাল করিয়া নজর করিলাম, আর দেখ, সে আমার প্রসূত সন্তান নয়। অন্য স্ত্রীলোকটি বলিল, না, জীবিত সন্তান আমার, মৃত সন্তান তোমার। প্রথম স্ত্রী বলিল, না, না, মৃত সন্তান তোমার, জীবিত সন্তান আমার। এইরূপে তাহারা দুই জনে বাদশাহ্‌র সামনে কথা-কাটাকাটি করিল। তখন বাদশাহ্ বলিলেন, এক জন বলিতেছে, এই জীবিত সন্তান আমার, মৃত সন্তান তোমার; অন্য জন বলিতেছে, না, মৃত সন্তান তোমার, জীবিত সন্তান আমার। পরে বাদশাহ্ বলিলেন, আমার কাছে একখানা তলোয়ার আন। তাহাতে বাদশাহ্‌র কাছে তলোয়ার আনা হইল। বাদশাহ্ বলিলেন, এই জীবিত ছেলেটিকে দুই খণ্ড করিয়া ফেল, আর এক জনকে অর্ধেক, এবং অন্য জনকে অর্ধেক দাও। তখন জীবিত ছেলেটি যাহার সন্তান, সেই স্ত্রী বাদশাহ্কে বলিল, (সন্তানের জন্য তাহার প্রাণ কাঁদিয়া উঠায় সে বলিল,) হে আমার খোদাবন্দ, আরজ করি, জীবিত ছেলেটি উহাকে দিন, ছেলেটিকে কোন মতে হত্যা করিবেন না। কিন্তু অপর জন বলিল, সে আমারও না হউক, তোমারও না হউক, দুই খণ্ড কর। তখন বাদশাহ্ জওয়াবে বলিলেন, জীবিত ছেলেটি উহাকে দাও, কোনমতে হত্যা করিও না; ঐ উহার মাতা। বাদশাহ্ বিচারের এই ফয়সালা করিলেন, তাহা শুনিয়া সমস্ত ইস্রায়েল বাদশাহ্ হইতে ভীত হইল, কেননা তাহারা দেখিতে পাইল, বিচার করিবার জন্য তাঁহার দিলে আল্লাহ্‌র দেওয়া জ্ঞান আছে। (কিতাবুল মোকাদ্দস, নবীদের কিতাব, বাদশাহনামা (১), ৩: ১৬-২৮) এই বিচার কাহিনী আমরা স্কুলের পাঠ্যবইয়ে ‘কাজির বিচার’ নামে পাঠ করিয়াছিলাম। দুনিয়ার যে সকল রাজা সোলায়মানের জ্ঞানের খবর শুনিয়াছিলেন, তাঁহাদের নিকট হইতে সর্বদেশীয় লোক সোলায়মানের জ্ঞানের কথা শুনিতে আসিত–এ সত্যে সন্দেহ থাকিতে পারে না।

দোহাই

১. আহমদ ছফা, ‘অপূর্ব বিচার,’ নূরুল আনোয়ার (সম্পাদিত) [আহমদ ছফা রচনাবলি]: উত্তর খণ্ড (ঢাকা: খান ব্রাদার্স, ২০১১), পৃ. ১১-১৩; প্রথম প্রকাশ: সবুজ পাতা, বর্ষ ১, সংখ্যা ৬, জানুয়ারি ১৯৬৩।

২. আহমদ ছফা, ‘অনিশেষ ঋণ,’ সলিমুল্লাহ খান ও আবুল খায়ের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান (সম্পাদিত), অর্থ: আহমদ ছফা রাষ্ট্রসভা পত্রমালা, পৌষ ১৪২৫/ ডিসেম্বর ২০১৮, পৃ. ১৯-২৪; প্রথম প্রকাশ: কাজী দীন মোহাম্মদ গং (সম্পাদিত), শাহেদ আলী স্মারক গ্রন্থ (ঢাকা: শাহেদ আলী স্মৃতি সংসদ, ২০০২), পৃ. ১০৪-০৭।

৩. কিতাবুল মোকাদ্দস, বাংলা অনুবাদ, (ঢাকা: বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি, তারিখ নাই), নবীদের কিতাব, বাদশাহনামা (১)।

৪. নূরুল আনোয়ার, ‘ভূমিকা’, নূরুল আনোয়ার (সম্পাদিত) [আহমদ ছফা রচনাবলি]: উত্তর খণ্ড (ঢাকা: খান ব্রাদার্স, ২০১১), পৃ. ৫-৬।

 

প্রকাশ: সমকাল, ২৭ জুলাই ২০২৩।