বিশ্বের ইতিহাসে নানান সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। উন্নয়নশীল, অনুন্নত, উন্নয়নকামী কিংবা উন্নত দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ কিংবা বিদ্রোহ হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের কাছে একেবারে পরিচিত শব্দ। লেখক সলিমুল্লাহ খান ‘আদমবোমা’ বইটিতে আঠারোটি প্রবন্ধ সন্নিবেশিত করেছে। বইয়ের প্রতিটি প্রবন্ধ পাঠকমহলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি প্রবন্ধগুলোকে পাঁচভাগে ভাগ করেছেন। ভাগগুলো হচ্ছে পূর্বাভাস, আদমবোমা, যুদ্ধ ও সাম্রাজ্য, সাম্রাজ্য ও সংস্কৃতি এবং সত্যের প্রয়োগ। শেষে সংবর্ধনা নামে আরেকটি অধ্যায়ে ছয়টি লেখা সংযুক্ত করেছেন। সংবর্ধনা ভাগের লেখাগুলো ভাবুক ও চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। লেখক সলিমুল্লাহ খান প্রবন্ধগুলি দীর্ঘ বার বছর ধরে লিখেছেন। ১৯৯৮ সাল হতে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সময়ে তিনি লিখেছেন। পৃথিবীতে গত এক যুগ ধরে সাম্রাজ্যবাদ মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ায় নতুন নতুন উপনিবেশ স্থাপনের যুদ্ধ চলছিল তারই প্রেক্ষাপটে আলোচ্য প্রবন্ধগুলি রচিত হয়েছে বলে মনে হয়। লেখক সলিমুল্লাহ খান ‘আদমবোমা : পশ্চিমা সাম্রাজ্যের বর্ণপরিচয়’ প্রবন্ধে খ্যাতিমান লেখক তালাল আসাদের লেখা ‘নরবিজ্ঞান ও পররাজ্যাভিযান’ আলোচিত বইয়ের সন্ধান পাওয়া যায়। তালাল আসাদের আরো কয়েকটি লেখার উদাহরণ উল্লেখ রয়েছে এ প্রবন্ধে।
‘২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বরের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অথবা তাঁহার তাবেদার মিত্রশক্তিপুঞ্জ – দুনিয়ার যে যে এলাকাকে তাঁহারা ‘মধ্যপ্রাচ্য’ নাম দিয়াছেন সেই সেই এলাকায় -কম করিয়া বলিলেও চারিটি যুদ্ধ শুরু করিয়াছেন। একটা আফগানিস্তানে, একটা এরাকে। আর ফিলিস্তিনের গাজা জেলায় ও লেবাননে একটা করিয়া। বলা হইয়াছে ঐ সকল দেশের জনসাধারণকে রক্ষা করাই এই সকল যুদ্ধের লক্ষ্য। কিন্তু তালাল আসাদ দেখাইতে চাহেন আসল লক্ষ্য তাহা নহে, ‘অন্য কিছু’। এই ‘অন্য কিছু’ অন্য কিছুই নহে, শুদ্ধ এসলাম ধর্মের শুদ্ধি বা সংস্কারকর্ম। এই লক্ষ্যেরও আবার লক্ষ্য আছে। আর তাহা হইতেছে পাশ্চাত্যের মনোমত প্রজাসমাজ ও প্রজারাষ্ট্র গড়িয়া তোলা। ইহার লক্ষ্য অন্য ধরনের – অর্থাৎ অন্য বিশ্বাসের – সমাজ ও মানুষকে আইন করিয়া নিষিদ্ধ করা। এই ধরনের লক্ষ্য অর্জন করিতে এয়ুরোপ ও আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রকে ভাবের ঘরে কয়েক দফা চুরির আশ্রয় লইতে হইয়াছে। তালাল আসাদ তাহার কয়েকটা এক্ষণে পরিষ্কার দেখাইয়া দিতে পারিয়াছেন।’ (পৃ.৪২-৪৩)
বইটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করে বিশ্বের ইতিহাসে খ্যাতিমান ও আমার অজানা বহু দার্শনিকদের সম্পর্কে জানতে পেরেছি। যেমন, ফরাসি প-িত আব্রাম-আয়াসিস্থ-আঁকতিল-দুপেরোঁ, ইংরেজ মহাত্মা উইলিয়াম জোনস, ফরাসি দেশের সিলভেস্ত্র দো সাসি,এর্নেস্ত রেনাঁর, মহাত্মা লুই মাসিনোঁ, প্রাচ্যব্যবসায় বিশারদ এডোয়ার্ড উইলিয়াম লেন, স্যার হ্যামিল্টন গিব ও মার্কিন বার্নার্ড লুইস প্রমুখ যুদ্ধংদেহি গবেষক ও প্রচারকগণ। এয়ুরোপের সেরা লেখক গুস্তাব ফ্লবেয়রের, ইতালির প-িত জমবাতিস্তা ভিকো, ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো, ফরাসি নৃবিজ্ঞান বিশারদ ক্লদ লেভি -স্ত্রস ও ফিলিস্তিনি এডোয়ার্ড সায়িদ উল্লেখযোগ্য। ফরাসি প-িত ও পর্যটক কঁস্তাতা-ফ্রাঁসোয়া দে শাসবুফ ভলনি, কার্ল মার্কস ও বেনজামিন ডিজরেলি।
এডোয়ার্ড সায়িদ ফরাসি, জার্মান, ইতালীয় ভাষা ও মাতৃভাষা আরবিও ভালো জানেন। তিনি একজন প-িত ব্যক্তি। এডোয়ার্ড সায়িদ বলেন, “প্রাচ্যব্যবসায় যা বলে তা প্রাচ্য বিষয়ে পাশ্চাত্য (মানে বাইরে) থেকে তৈরি করা কিছু ধারণা। সেই ধারণার গোড়ায় যে বিশ্বাস তা অপরীক্ষিত, অসত্য কথা। প্রাচ্যব্যবসায়ের মতে পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য চিরকালই আলাদা। পাশ্চাত্য আলোকময়, প্রাচ্য অন্ধকার। পাশ্চাত্য যুক্তিনশিন, প্রাচ্য যুক্তিবিবর্জিত, কুসংস্কারাচ্ছান্ন। এই ক্রমে দেখা যায় প্রতীচী শ্রেষ্ঠ, প্রাচী নিকৃষ্ট। অতয়েব আপনারা বুঝতেই পারছেন পাশ্চাত্যের হাতে শাসিত হওয়া প্রাচ্যের জন্য কেন ভালো, কেন কপাল। এডোয়ার্ড সায়িদ দেখাচ্ছেন – এসব ধারণা পাশ্চাত্যের বাসনার প্রকাশ, সাব্যস্ত সত্য মাত্র। এই ধারণার প্রসার শুদ্ধ তথাকথিত সাম্রাজ্যবাদী সাহিত্যিকদের মধ্যেই নয়- সব আলোচনার মধ্যেই দেখা যায়।” (পৃ.১৬৬)
আদমবোমা কি জিনিশ? আদমবোমার সংজ্ঞা কি? তা জানতে হলে বইটি মনযোগ সহকারে পাঠ করা উচিত। আমরা জানি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ১৯১৪-১৯১৮ সালে সংঘটিত হয়েছিল। যেকোন যুদ্ধ বিশ্বে শান্তি বয়ে আনতে পারেনা। হত্যা, খুন,ধর্ষণ ও নানা ধরনের অত্যাচার নির্যাতন সংঘটিত হয়। লেখক সলিমুল্লাহ খানের মতে, ‘আদমবোমা শুদ্ধ পদার্থ নহে, পদও বটে। পদও পদার্থ যেখানে একাকার হয় তাহাকে বলে সম্বল বা সিম্বল। আত্মহত্যা করিয়া কেহ স্বাধীন হয় না এ কথা সত্য কিন্তু আত্মহত্যার সম্ভবনা হিসাবে না লইলে স্বাধীনতার কোন ভিত্তিই থাকে না। মহাত্মা গান্ধি হইতে স্যার বিদিয়াধর সুরজপ্রসাদ নাইপল, প-িত এডোয়ার্ড সায়িদ হইতে কবি শামসুর রাহমান পর্যন্ত স্বাধীনতা- ব্যনসায়ের নানান রূপ এই বইতে দেখানো হইয়াছে।’
এটমবোমা বা পারমাণবিক বোমা কিংবা কঙ্করবোমা অথবা নানান ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের কথা জানি কিন্তু আদমবোমার সঠিক ব্যাখ্যা আমাদের জানা উচিত। পৃথিবীর ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে নানান আত্মঘাতী বা আদমবোমা বা শহিদী বোমার হামলার ঘটনা দেখা যায়। ১৯৮৭ সালের ফিলিস্তিনে পামর জনসাধারণ এক প্রকার ঢেলাযুদ্ধ, ২০০০ সালে অক্টোবর হতে জেরুজালেমে আল আকসা মসজিদে আক্রমণ। ২০০১ সালের ১ জানুয়ারিতে প্রথম শহিদ বোমাভিযান শুরু করে। ইসরায়েল -ফিলিস্তিন যুদ্ধ এখনো অব্যাহত রয়েছে। পুরা পৃথিবী অবাক হয়ে রয়েছে। এসলামি জেহাদ নামা স্থপতি হল ফতি শিকাকি। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আদমবোমা বিস্ফোরণের পর বিশ্বে নতুন করে টনক নড়ে। ‘মার্কিন দার্শনিক রিচার্ড রোটি রটাইয়াছেন পাশ্চাত্য জগতের কোথাও যদি সন্ত্রাসবাদীরা সেই রকম বড় হামলা আরো একবার করিতে পারে তো পশ্চিমে এতদিন ‘গণতন্ত্র’ বলিয়া সামাজিক আদর্শ প্রতিষ্ঠালাভ করিয়াছে তাহা শেষ হইয়া যাইবে। ইহার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে পামর সাধারণের গণতান্ত্রিক অধিকার কিছু পরিমাণ সঙ্কোচনের শিকার হইয়াছে – সেই দেশে তথাকথিত ‘দেশপ্রেম আইন’ পাশ হইয়াছে। ইহাই প্রমাণ। রিচার্ড রোটির উদ্বেগ শুদ্ধ তাঁহার একার হইলে কথা চলিত না। চলিতেছে কারণ ২০০১ সালের অনেক আগে হইতেই বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও প্রচারক মহল হইতে বলা হইতেছে ‘সভ্যতার সংঘাত’ বা সভ্যতায় সভ্যতায় যুদ্ধ শুরু হইয়া গিয়াছে।’ (পৃ.৫১) যুগ যুগে পৃথিবীর ইতিহাসে সভ্যতার দ্বন্দ্ব ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু স্বার্থের জন্য এ যুদ্ধ, এ দ্বন্দ্ব। স্বার্থের বিষয়টি রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কিংবা সামরিক।
এখানে উল্লেখ করা যায়, মার্কিন দার্শনিক রিচার্ড রোটি,ইতালীয় মনীষী সেসার বেকারিয়া, জঁ বেশলে জনৈক ফরাসি প-িত বুফে, তালাল আসাদ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়ন এলস্টার ও আরিয়েল মেরারি নামে বিশেষজ্ঞরা আত্মঘাতী বোমা নিয়ে আলোচনা করেছেন। “ধর্মবিদ্যার খ্যাতনামা প-িত আইভান স্ট্রেনস্কি বলিতেছেন, বোমা ফাটাইয়া আত্মহত্যা করিবার ব্রত এক ধরনের ধর্মীয় আত্মোৎসর্গ বা জান কোরবানি বৈ নহে। গবেষক বেগম মে জায়ুসি লিখিয়াছেন, এই জাতীয় আত্মোৎসর্গের আসল উদ্দেশ্য রাজনৈতিক নিপীড়ন ও অপমান হইতে মুক্তির প্রয়াস, তবে শেষ বিচারে ইহাও আত্মদানের মতন ধর্মীয় বিশ্বাস হইতে জন্ম লইয়াছে।’ (পৃ.৫৭) ফরাসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্রুনো এতিয়ন আত্মহত্যা বা আত্মঘাতী বোমা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে এ গ্রন্থে।
বইটির শুরুতে হ্যারল্ড পিন্টারের ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ‘বোমা’ কবিতাটি রয়েছে। কবিতাটি নিম্নরূপ:
“বলবার মতো আমাদের আর কোনো কথা নাই
যা বলার তা বলবে আমাদের বোমা
আমাদের মাথা ফেটে বেরিয়ে এসেছে ও মা
যা বলার তা বলবে আমাদের বোমা
আমাদের শেষ ফোঁটা লোহু চুষে খায়
যা বলার তা বলবে আমাদের বোমা
মড়ার মাথার খুলি
সুন্দর পালিশ হবে এমন বোমায়।”
বইয়ের পঞ্চম ভাগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের ইতিহাস এবং রাজনৈতিক ঘটনাবলির সাথে জড়িত। ‘ভারতের পরমাণু ও মহাত্মা গান্ধি’, ‘স্যার বিদিয়াধর সুরজপ্রসাদ নাইপলের অখ- ভারত’ এবং ‘একবাল আহমদের ১৯৭১’। সবকটি প্রবন্ধ নিয়ে স্বল্প পরিসরে লিখা সম্ভব নয়। তাই একবাল আহমদের ১৯৭১ প্রবন্ধ নিয়ে একটু আলোচনা করার চেষ্টা করছি। একবাল আহমদ বিশ্বের ইতিহাস একটি পরিচিত নাম। তিনি একজন পাকিস্তানি মনীষী। জন্মসূত্রে ভারতীয়। অঙ্গীকারসূত্রে আরব,ভিয়েতনামি কিংবা মার্কিন। তাঁকে বাঙালি ও বলা যায়। বিশেষ করে ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে থামাতে বাধ্য করেছিলেন তিনি। “১৯৭১ সনের যুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে বলার মতন বুদ্ধিজীবী সারা পাকিস্তানে খুঁজিয়া পাওয়া সহজ ছিল না। একবাল আহমদ ছিলেন সেই বিরল প্রজাতির সদস্য। তিনি শরিক হইয়াছিলেন আলজিরিয়ার মুক্তিযুদ্ধে। ফিলিস্তিন মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে কাজ করাও তাঁহার জন্য কম সাহসের কাজ ছিল না। কিন্তু স্বাধীন আলজিরিয়া ও ফিলিস্তিন মুক্তিসংগ্রামের নেতাদের উচিত সমালোচনা করিতে তিনি কখনো দ্বিধা করেন নাই। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে তিনি যেমন দ্ব্যর্থহীন সমর্থন জানাইয়াছিলেন তেমনি সংগ্রামি নেতৃত্বের দোষত্রুটি নির্দেশ করিতে পিছ-পা হন নাই। ‘একবাল আহমদের ১৯৭১’ প্রবন্ধে সলিমুল্লাহ খান লিখিয়াছেন, ‘দেশ আলাদা হইলেই সামাজিক অন্যায় শেষ হয়, ইহাও তিনি ভাবিতেন না।’ তাঁহার চিন্তাধারার এই রকম নমুনা এই প্রবন্ধে আরো পাওয়া যাইবে।” (পৃ.১৩)
পৃথিবীতে আলোচিত ও সমালোচিত দুইটি শব্দ হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ। এই সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বিশ্বের নানান দেশের লেখক বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু একবাল আহমদ সন্ত্রাসবাদ নিয়ে অন্যভাবে বলেছেন ও লিখেছেন। ‘‘১৯৮৬ সালের এক লেখায় একবাল আহমদ দেখিয়েছিলেন উৎস বিচারে সন্ত্রাসবাদ পাঁচ ধরনের। সন্ত্রাসবাদের জন্মদাতা বা কারণবীজ হতে পারে ‘রাষ্ট্র, ধর্ম,আন্দোলন -সংগ্রাম বা বিপ্লব, অপরাধচক্র ও মানসিক অসুস্থতা’। এই হাতের পাঁচ থেকে শেষে দুইটা বাদ দিলে বাকি যা থাকে সেই তিন কারণকে তিনি এক কথায় বলেছিলেন ‘রাজনৈতিক’ কারণ। সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে ছয়দফা সিদ্ধান্ত পেশ করেছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী একবাল আহমদ।” (পৃ.১৭৩) একবাল আহমদ পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে লিখেছেন। ‘একবাল জানিতেন,পূর্ব পাকিস্তান আক্রমণ করিবার কোন প্রকারের অধিকার – কি রাজনৈতিক, কি অর্থনৈতিক,কি নৈতিক -পাক সেনাবাহিনীর নাই। পাকিস্তানের ইতিহাসে অনুষ্ঠিত প্রথম অবাধ নির্বাচনে যেই দল নিরঙ্কুশ জয় পাইল সেই দল দেশের অখ-তা বজায় রাখিবে না – এই রায় দিবার অধিকার সেনাবাহিনীকে কেহ তো দেয় নাই।’ (পৃ.২৩৫) এরকম গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের ঘটনা সম্পর্কে নানান বর্ণনা রয়েছে বইটিতে। তবে আজকের পৃথিবীতেও যুদ্ধ ও সন্ত্রাসী হামলা থেমেনি। দেশে দেশে যুদ্ধ চলমান রয়েছে। মার্কিন আগ্রাসন ও আধিপত্য বিস্তার আরো বৃদ্ধি করতে চায়। আফগানিস্তানে হামলা, লিবিয়ায় আক্রমণ, ফিলিস্তিনে আক্রমণ, রাশিয়া -ইউক্রেন, ইসরায়েল -ফিলিস্তিনের যুদ্ধ এখনো বন্ধ হয়নি। নিরীহ মানুষের মৃত্যু ও প্রাণ হানি ঘটে যুদ্ধে। স্বাভাবিক জীবনকে অস্বাভাবিক করে তোলে যুদ্ধ। ভয়ের ত্রাস সৃষ্টি করে সন্ত্রাসবাদ। আমরা চায় যুদ্ধ বন্ধ হোক।পৃথিবী শান্তিময় হোক। মানুষের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিত হোক। ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের প্রতি অন্যায় অত্যাচার বন্ধ করা হোক। মারামারি হানাহানির পরিবর্তে শান্তির বাতাস ছড়িয়ে পড়ুক এ বিশ্বে।
লেখকের আরো অনেকগুলো বই রয়েছে। প্রতিটি বই পাঠকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। লেখক সলিমুল্লাহ খান ২০২১ সালের মার্চ মাসে ফিনল্যান্ডের কবি পেন্টি সারিকস্কির কাব্যগ্রন্থ ‘উহারা বাতাসে : কবিতা ১৯৫৮-১৯৮০’ অনুবাদ করেন। তিনি জার্মান কবি ডরোথি জুল্লের কবিতার বই অনুবাদ করেন। ১৯৯৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ‘আল্লাহর বাদশাহি’ নামে প্রথম প্রকাশ পায়। বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ পায় ফেব্রুয়ারি ২০১২ সালে। অনুবাদ করেছেন ‘সক্রাতেসের তিন বাগড়া’ (২০০৫)। এছাড়া আরো অনেকগুলো বই রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:- উৎসর্গ : পরিবার প্রজাতি রাষ্ট্র (২০২৩), ঠাকুরের মাৎস্যন্যায়: ভাষা-শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা (২০২৩), প্রার্থনা (২০১৯), আহমদ ছফা সঞ্জীবনী (২০১০), স্বাধীনতা ব্যবসায় (২০১১), আদম বোমা (২০০৯), এক আকাশের স্বপ্ন (১৯৮১) ও বাংলাদেশ: জাতীয় অবস্থার চালচিত্র (১৯৮৩) ইত্যাদি। তিনি অনেকগুলো বই সম্পাদনা করেছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন গবেষণামূলক জার্নাল ও নানান পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন।
এ বইয়ের ২৭৩-২৭৬ পৃষ্ঠায় লেখকের তিনটি কবিতা রয়েছে। কবিতাগুলোর ভাষা সহজ সরল ও সুন্দর। পাঠকদের বুঝতে কষ্ট হবে না। আমার ভালো লাগার দুয়েকটা লাইন তুলে ধরা হল। ‘ভাষা’ কবিতায় লিখেছেন,
“বৈদেশিক ভাষার লগে
প্রেম আমার
পড়ান মাস্টারবাবু
উঁচা লম্বা
চোখ নীল
মাস্টারবাবু আমার
একটা মুদ্রাদোষ
গলাটা একটু
না চড়ালে ওর মুখে
জাপানি বোল ফোটে না”
তিনি ‘বিষ্টি’ কবিতায় লিখেছেন,
“বিষ্টি আর পড়বে না একদিন
ঝরবে বেগুনিপাড়ের আলো আকাশের ফুটা
রেখে বিদায় নিয়েছে ওজোন- বলে যাই
প্রাণ লুকাবার ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই
আলো ঝরে কালে
রোদ হবে বিষ্টি হবে
হবে নয় ছয়
বে-ইনসাফ ঘুষখোর এই কলির দুনিয়ায়
হয় বিষ্টি হয়”
আমি পাঠক হিসেবে উক্ত বইয়ের প্রচার ও সফলতা কামনা করছি।
আদমবোমা, সলিমুল্লাহ খান, প্রচ্ছদ : মুর্তজা খাতুজিয়ান এর তৈলচিত্র অবলম্বনে শিবু কুমার শীল, ইতিহাস কারখানা ২, আগামী প্রকাশনী, মার্চ ২০০৯, ঢাকা, পৃ: ২৯৩, মূল্য : ৩২০ টাকা।
মুহাম্মদ ইসহাক, প্রাবন্ধিক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ: আন্দরকিল্লা, ২৫ নভেম্বর ২০২৪