‘বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত (আধুনিক যুগ)’ গ্রন্থের ভূমিকায় মুহম্মদ আবদুল হাই লিখিয়াছিলেন, “কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের শিক্ষা দফতরের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলা সাহিত্যের একটি ধারাবাহিক ইতিহাস রচনার ভার পড়ে জনাব ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সৈয়দ আলী আহ্সান এবং আমার ওপর। প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাস রচনা করেন ডক্টর শহীদুল্লাহ্ আর আধুনিক যুগের (মূলত বৃটিশ আমলের) ইতিহাস রচনা করি আমি ও সৈয়দ আলী আহ্সান। আলোচ্য গ্রন্থের রচনা শেষ হয় ১৯৫৪ সনের প্রথম দিকে।” (আবদুল হাই ও আলী আহ্সান ১৯৫৬: ভূমিকা)
বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের ইতিবৃত্ত রচনা করিতে বসিয়া এই লেখকদের নানান অসুবিধার সম্মুখীন হইতে হইয়াছিল। উদাহরণস্বরূপ আবদুল হাই সাহেব অভিযোগ করিয়াছিলেন: “এ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার সবচেয়ে বড়ো অসুবিধা হলো এই যে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে এ কাল পর্যন্ত সে সব মুসলিম লেখককে আমরা আলোচনার অন্তর্ভুক্ত করেছি তাঁদের সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কোন আলোচনা তো দূরের কথা, ধারাবাহিকভাবে তাঁদের সমস্ত লেখাও আমরা পাইনি। এ কাজ হাতে নিয়ে পদে পদে আমরা উপাদানের অভাব বোধ করেছি।” (আবদুল হাই ও আলী আহ্সান ১৯৫৬: ভূমিকা)
সৈয়দ আলী আহ্সানের দ্বিতীয় প্রস্তাব: “এ সময়কার রুশ বিপ্লব এ দেশীয় লোকদের মনে দেশে বিপ্লবের সম্ভাবনাকে আরও সহজ বলে ভাববার সুযোগ দেয়। ১৯১৮ সালে এ রুশ বিপ্লব সংঘটিত হয়।” (আবদুল হাই ও আলী আহ্সান ১৯৫৬: ৩১৮)
আর তাঁহার তৃতীয় প্রস্তাব আরও চিত্তাকর্ষক: “রুশ বিপ্লবের সংগে কিছুটা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এক বাঙালী যুবক ভারতবর্ষে ফিরে এসে এদেশে আন্তর্জাতিক কমিউনিষ্ট পার্টির এক শাখা স্থাপন করেন। দেশের সন্ত্রাসবাদ এবং সর্বপ্রকার বৈপ্লবিক আন্দোলনের সংগে এঁর যোগ ছিল। ইনি সাহিত্যিক প্রতিভাসম্পন্ন ছিলেন এবং নজরুল ইসলামের সংগে তাঁর প্রীতির সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। এঁর নাম মোজাফ্ফর আহমদ। দেশের মধ্যে যে নবজাগরণের সূত্রপাত হয়েছে একদা ইনি তখনকার অনেক প্রবন্ধে লিখেছেন, এবং তাঁর সুরে সুর মিলিয়েছিলেন বারীন্দ্র কুমার ঘোষ, এবং আরও অনেকে।” (আবদুল হাই ও আলী আহ্সান ১৯৫৬: ৩১৮)
সৈয়দ আলী আহ্সান উপাদানের অভাবে কি অপরূপ কষ্ট পাইয়াছিলেন তাহার দলিল চতুর্থ প্রস্তাবে মিলিতেছে। তিনি লিখিতেছেন: “এ সময় বাংলা দেশের মুসলমানকে ইংরাজদের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ ক’রবার অন্য একটা উপায় ছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে তুরস্ক, জার্ম্মান পক্ষে থেকে পরাভূত এবং পর্যুদস্ত হয় এবং তার নব-জাগরণের সম্ভাবনা অনেকটা নষ্টই হয়ে যায়। কামাল পাশার আবির্ভাব ঘটে এর অব্যবহিত পরেই। কামাল পাশা জাতীয় কল্যাণের কথা চিন্তা করে খেলাফত উঠিয়ে দেন। তখন আমাদের দেশে একটা প্রবল প্রতিবাদ ওঠে এবং দেশে বিভিন্ন স্থানে খেলাফত কমিটি স্থাপিত হয়।” (আবদুল হাই ও আলী আহ্সান ১৯৫৬: ৩১৮-১৯; আবদুল হাই ও আলী আহ্সান ১৯৬৪: ৪২৮)
এই লেখকের বিশ্লেষণ অনুসারে, “দেশব্যাপী এই খেলাফত আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বব্যাপী মুসলমানকে একত্রিত করা এবং স্বাধীন ক্ষেত্রে তাদের বিচরণের সুযোগ দেওয়া। সুতরাং ভারতবর্ষে তখনকার স্বরাজ এবং বিভিন্ন প্রকার বিপ্লব আন্দোলনের সংগে এর সহজেই একটা যোগসূত্র স্থাপিত হল। কেননা, স্বাধীনতার দাবীর দিক্ থেকে এদের মধ্যে একটা আশ্চর্য ঐক্য ছিল।” (আবদুল হাই ও আলী আহ্সান ১৯৫৬: ৩১৯)
‘বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত (আধুনিক যুগ)’ প্রথম প্রকাশিত হইয়াছিল ১৯৫৬ সালে। ইহার পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ ছাপা হয় ১৯৬৪ নাগাদ। এই নিবন্ধে আমরা যে অংশগুলি উদ্ধার করিয়াছি দ্বিতীয় সংস্করণে সেইগুলিতে কোন প্রকার পরিবর্তন (বা পরিবর্ধন) করা হয় নাই। এই গ্রন্থের দুই সংস্করণের মাঝামাঝি–১৯৫৯ সালের মে মাসে–প্রকাশিত হয় মুজফ্ফর আহমদ [যাঁহার নামের বানান এক সময় ছিল ‘মোজাফ্ফর আহমদ’] লিখিত ‘কাজী নজরুল প্রসঙ্গে (স্মৃতিকথা)’।
এই স্মৃতিকথার প্রস্তাবনাযোগে মুজফ্ফর আহমদ লিখিয়াছিলেন: “আজকাল নজরুল ইসলাম সম্পর্কে অনেকে অনেক কিছু লিখিতেছেনও। বড় দুঃখ যে এই সব লেখার ভিতরে কিছু কিছু লেখা নিছক কল্পনাপ্রসূত। এই জাতীয় কল্পনা-বিলাস বন্ধ হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়। মাসিক কাগজের বা অন্য কাগজের পরিচালকেরা যদি কিঞ্চিৎ সতর্কতা অবলম্বন করেন তবেই এই জাতীয় লেখার প্রকাশ বন্ধ হওয়া সম্ভব।” (মুজফ্ফর ১৯৫৯: ৭)
একটু ভাবিলেই পরিষ্কার হইবে, মুজফ্ফর আহমদ সম্পর্কে সৈয়দ আলী আহ্সান যাহা লিখিয়াছেন তাহা নিছক কল্পনাপ্রসূত। মুজফ্ফর সাহেব কখনও ভারতবর্ষের বাহিরে গমন করিয়াছিলেন এমন অভিযোগ ইংরেজ সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ পর্যন্ত উঠাইতে পারে নাই। সুতরাং তাঁহার ভারতবর্ষে ফিরিয়া আসার কথাও অবান্তর। অবশ্য একথা অসত্য নয়, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গড়ার প্রথম যুগে তিনিও একজন প্রতিষ্ঠাতা নেতার ভূমিকা পালন করিয়াছিলেন।
সবচেয়ে বেশি মারাত্মক অভিযোগ: “দেশের সন্ত্রাসবাদ এবং সর্বপ্রকার বৈপ্লবিক আন্দোলনের সংগে এর যোগ ছিল।” এই কথাটি তো একান্তই (এবং ক্ষমাহীন) কল্পনা-বিলাস। মুজফ্ফর আহমদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের কখনও কোন যোগ ছিল না, তাঁহার যোগ জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে। তিনি আযৌবন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করিয়াছেন। তাঁহার বিশ্বাস ও কাজ দুইই ছিল গণ আন্দোলন গড়িয়া তোলার পক্ষে। তিনি শ্রমিক ও কৃষকদের মধ্যে কাজ করিয়াই জাতীয় আন্দোলনে শরিক হইয়াছিলেন।
মুজফ্ফর আহমদের সাহিত্য-প্রতিভা বিষয়ে সৈয়দ আলী আহ্সান অবশ্য কিছু ভুল লিখেন নাই। তিনি যদি রাজনীতিতে মনোনিবেশ না করিয়া দ্বিতীয় কোন পেশায় শামিল হইতেন তো তাহা হইত নিঃসন্দেহে সাহিত্য। ১৯৬৯ সনে প্রকাশিত আত্মজীবনীর প্রথম দিকে তিনি লিখিয়াছেন: “আমার জীবনের পেশা কি হবে, সাহিত্য না, রাজনীতি এই নিয়ে আমি পুরো ১৯১৯ সাল ভেবেছি। সত্য কথা বলতে, আমার মনের ভিতরে সাহিত্য ও রাজনীতির দ্বন্দ্ব চলেছিল। কবি আমি ছিলেম না। গল্প লেখক বা ঔপন্যাসিক হওয়ার স্বপ্ন আমি কোনো দিন দেখিনি। সেই ভাষা কোনো দিন আমার আয়ত্তে ছিল না। আমার প্রবল কামনা ছিল যে আমি একজন প্রবন্ধকার হব। আমার পরবর্তী জীবনেও, অর্থাৎ রাজনীতিক জীবনে তা হওয়ার পথে কোনো প্রতিবন্ধক ছিল বলে আমার মনে হয় না। তবুও আমি প্রবন্ধকারও হতে পারিনি, যদিও আমি খবরের কাগজ চালিয়েছি।” (মুজফ্ফর ১৯৭১: ২২)
মুজফ্ফর আহমদের মনে সাহিত্য ও রাজনীতির যে দ্বন্দ্ব চলিতেছিল তাহাতে শেষ পর্যন্ত জয় হইল রাজনীতির। তিনি লিখিতেছেন: “১৯২০ সালের শুরুতে আমি স্থির করে ফেললাম যে রাজনীতিই হবে আমার জীবনের পেশা। আমি রাজনীতিক সভা-সমিতি ও মিছিলে যোগ দেওয়া শুরু করেছিলাম তো ১৯১৬ সাল হতে।” (মুজফ্ফর ১৯৭১: ২২)
এই মহান মানুষটির স্মৃতিকথা হইতেই জানা যায় কাজী নজরুল ইসলামের সহিত তাঁহার পরিচয় ঘটে ১৯১৮ সালে। ঘটে চিঠিপত্রের মারফতে। মুজফ্ফর আহমদ বিশদ করিয়াছেন: “তখনকার দিনে “বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি” নামক একটি সাহিত্য-সংগঠন ছিল। তার অফিস ছিল কলকাতার ৩২ নম্বর কলেজ ষ্ট্রীটের দোতলার সামনের দিককার অংশে। “বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা” নাম দিয়ে এই সমিতির তরফ হতে একখানা ত্রিমাসিক মুখপত্র বার করা হতো। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সাহেব (পরে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্) ও ভোলার মুহম্মদ মোজাম্মেল হক সাহেব এই পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। আমি ছিলাম সমিতির সহকারী সম্পাদক ও একমাত্র সব সময়ের কর্মী। ত্রিমাসিক কাগজখানা বা’র করার সব কাজ আমায় করতে হতো। মাঝে মাঝে তার কিঞ্চিৎ সম্পাদনাও যে আমি করতাম না তা নয়। “বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা”র এই কাজের কল্যাণেই কাজী নজরুল ইসলামের সহিত আমার প্রথম পরিচয় হইয়াছিল।” (মুজফ্ফর ১৯৫৯: ৯)
নজরুল ইসলামের সঙ্গে রুশ বিপ্লবের সম্পর্ক নিয়ে আমরা পরে আরো কিছু লিখিতেছি। তবে তাহার আগে খেলাফত আন্দোলন সম্পর্কে সৈয়দ আলী আহ্সানের কল্পনা বিলাসের একটা বিহিত করা প্রয়োজন। তিনি লিখিয়াছেন। “দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে তুরস্ক, জার্ম্মান পক্ষে থেকে পরাভূত এবং পর্যুদস্ত হয় এবং তার নব-জাগরণের সম্ভাবনা অনেকটা নষ্টই হয়ে যায়।” আমরা জানি, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে নয়, প্রথম মহাযুদ্ধেই তুরস্ক পরাজিত হয়। ‘প্রথমের’ জায়গায় ‘দ্বিতীয়’ হয়ত ছাপার ভুল, কিন্তু দ্বিতীয় সংস্করণেও ইহা সংশোধিত হয় নাই দেখিলে দুঃখ বাড়িয়া যায়।
সৈয়দ আলী আহ্সান লিখিয়াছেন: “কামাল পাশার আবির্ভাব ঘটে এর অব্যবহিত পরেই। কামাল পাশা জাতীয় কল্যাণের কথা চিন্তা করে খেলাফত উঠিয়ে দেন। তখন আমাদের দেশে একটা প্রবল প্রতিবাদ ওঠে এবং দেশে বিভিন্ন স্থানে খেলাফত কমিটি স্থাপিত হয়।” এ দাবি সঠিক নয়। কামাল পাশা ওরফে মোস্তফা কামাল তো খেলাফত উঠিয়ে দিলেন মাত্র ১৯২৪ সালে। তার পর এদেশের খেলাফত কমিটিগুলিও উঠিয়া যায়।
তুলনা করুন মুজফ্ফর আহমদ লিখিয়াছেন কি এই প্রশ্নে: “আন্তর্জাতিক খিলাফত আন্দোলন আরম্ভ হয়েছিল ১৯১১ সালে। কিন্তু ১৯১৭ সালে ভারতে এই আন্দোলন বিশেষ হয়ে উঠেছিল এবং তা প্রবল রূপ ধারণ করেছিল ১৯২০ সালে।” (মুজফ্ফর ১৯৭১: ১২)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন আর রুশ বিপ্লব সম্পর্কেও সৈয়দ আলী আহ্সানের ধারণা সঠিক নয়। ১৯১৭ সাল হইতে দেশে যে নানান রকম আন্দোলন মাথা তুলিতেছিল তাহার কারণ জার্মান পক্ষের হাতে ব্রিটিশ পক্ষের পরাজয়ের সম্ভাবনা নয়, বরং অন্য কিছু। মুজফ্ফর আহমদ লিখিয়াছেন, “১৯২০ সালে তো দেশ টগবগ করে ফুটছিল। তার কারণ ১৯১৯ সালের “ভারত সংস্কার আইন” দেশ কিছুতেই মেনে নেবে না।” (মুজফ্ফর ১৯৫৯: ২০)
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুজফ্ফর আহমদ আরো খবর রাখিয়াছেন: “পর্বত ও সমুদ্রের বাধা সত্ত্বেও ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের প্রভাব আমাদের দেশের মজুরদের ওপরেও পড়েছিল। তারাও সংগ্রামের পথে পা বাড়িয়াছিলেন আগে হ’তেই।” (মুজফ্ফর ১৯৫৯: ২০)
আমরা দেখিয়াছি, মুজফ্ফর আহমদ যখন “বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা”য় সব সময়ের কাজ করিতেছিলেন তখন–অর্থাৎ ১৯১৮ সালে–চিঠিপত্রের মারফতে নজরুল ইসলামের সঙ্গে তাহার প্রথম পরিচয় ঘটে। ১৯১৯ সনের শেষে কিংবা ১৯২০ সনের শুরুতে তাঁহাদের প্রথম সাক্ষাৎ পরিচয় ঘটে কলিকাতায়। মুজফ্ফর আহমদের সাক্ষ্য হইতেই প্রমাণ করা সম্ভব তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ–এমনকি পত্রযোগে পরিচয়ের অনেক আগেই–নজরুল ইসলাম রুশ বিপ্লবের দিকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট হইয়াছিলেন।
আপাতত মুজফ্ফর আহমদের সাক্ষ্য উদ্ধার করিয়া এই নিবন্ধের উপসংহার করি। তিনি লিখিতেছেন: “‘ব্যথার দান’ নজরুল ইসলামের একখানা বহু প্রশংসিত গল্প পুস্তক। এই পুস্তকের প্রথম গল্প “ব্যথার দানে” বিপ্লবের পরের রুশ দেশের প্রতি নজরুল যে বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়েছিল তার পরিচয় পাওয়া যায়। করাচির সেনা-নিবাসেই ১৯১৮ সালে এই গল্পটি লিখিত হয়। ১৩২৬ বঙ্গাব্দের মাঘ সংখ্যক “বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা”য় “ব্যথার দান” ছাপা হয়েছিল। খ্রীষ্টীয় হিসাবে এটা ছিল ১৯১৯ সাল। তা থেকে কেউ কেউ মনে ধারণা করে নিয়েছেন যে গল্পটি আসলে ১৯১৯ সালের লেখা। কিন্তু তা ঠিক নয়। প্রথমেই মনে রাখতে হবে যে “বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা” ছিল একখানি ত্রিমাসিক কাগজ। তার কার্তিক সংখ্যায় (১৯১৮) আমরা নজরুলের “হেনা” শীর্ষক একটি গল্প ছেপেছিলাম। তাই “ব্যথার দান” ১৩২৬ বঙ্গাব্দের মাঘ (১৯১৯) সংখ্যার আগে ছাপানো আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এই দুটি গল্পই ১৯১৮ সালে পরে পরে আমাদের হাতে এসেছিল। ১৯১৭ সালের নবেম্বর মাসে [রুশ পঞ্জিকা অনুসারে অক্টোবর মাসে] রুশ দেশে সর্বহারা (প্রোলেটারিয়েট) বিপ্লব ঘটেছিল। তার এক বছর পার না হতেই নজরুল তার “ব্যথার দান” শীর্ষক গল্পটি লিখেছিল। কত তাড়াতাড়ি নজরুলের মন এই বিপ্লবের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল তা লক্ষণীয় বলেই গল্প লেখার আসল সনের ওপরে আমি এত বেশী জোর দিচ্ছি।” (মুজফ্ফর ১৯৫৯: ৬০)
দোহাই
১ মুহম্মদ আবদুল হাই ও সৈয়দ আলী আহ্সান, বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত (আধুনিক যুগ), ১ম সংস্করণ (ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৫৬)।
২ মুহম্মদ আবদুল হাই ও সৈয়দ আলী আহ্সান, বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত (আধুনিক যুগ), পরিবর্ধিত ২য় সংস্করণ (ঢাকা: স্টুডেন্ট ভয়েজ, ১৯৬৪)।
৩ মুজফ্ফর আহমদ, কাজী নজরুল ইসলাম প্রসঙ্গে (স্মৃতিকথা) (কলিকাতা: বিংশ শতাব্দী প্রকাশনী, ১৯৫৯)।
৪ মুজফ্ফর আহমদ, আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি: ১৯২০-১৯২৯, ২য় সংস্করণ (কলিকাতা: ন্যাশনাল বুক এজেন্সি, ১৯৭১)।
সমকাল, ২৫ মে ২০২৪