On peut fonder des empires glorieux sur le crime, et de nobles religions sur l’imposture.
খোদ অপরাধ মূলধন করে বড় বড় বাহাদুর সাম্রাজ্য দাঁড়িয়ে যেতে পারে, আর নিতান্ত জুয়াচুরির আশ্রয় নিয়েও প্রবর্তিত হতে পারে মহামহিম ধর্ম।—শার্ল বোদলেয়ার (১৯৬৪/ক: ২৫৬)
জগদ্বিখ্যাত ফরাসি কবি শার্ল বোদলেয়ার খ্রিস্টীয় উনিশ শতকের মাঝামাঝি কোন এক সময় লিখেছিলেন, ‘খোদ অপরাধ মূলধন করে বড় বড় বাহাদুর সাম্রাজ্য দাঁড়িয়ে যেতে পারে, আর নিতান্ত জুয়াচুরির আশ্রয় নিয়েও প্রবর্তিত হতে পারে মহামহিম ধর্ম।’ এই বক্তব্যের প্রথম অংশ কতখানি সত্য তলিয়ে দেখাই বর্তমান নিবন্ধের উদ্দেশ্য। আফগানিস্তানের উপর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের হামলা কি সেই ধরনের অপরাধ যার উপর একটা সাম্রাজ্য খাড়া করা যায়? এই প্রশ্নের তর্কাতীত জবাব লেখার সময় এখনো আসে নাই। তবু আমার কেন জানি মনে হয়েছে এই বিষয়ে এখনই লেখা আমাদের কর্তব্য।
আমেরিকা কী কারণে আফগানিস্তান আক্রমণ করল? মার্কিন সরকার প্রকাশ্যে যে কারণ দেখাচ্ছে, সেটাই কি আসল অথবা একমাত্র কারণ? ভিতরের প্রকৃত ব্যাপার কী তা জানার জন্য আমাদের বিশ, পঁচিশ এমনকি পঞ্চাশ বছরও অপেক্ষা করতে হতে পারে। এতদিন অপেক্ষা করার মতন সবুরশক্তি যাঁদের নাই তাঁদের দৃষ্টি আদ্যকালের গ্রিক ইতিহাসবেত্তা থুকুদিদিসের (Thucydides) লেখার দিকে আকর্ষণের চেষ্টা করলে কেমন হয়? এই ভাবনা থেকেই বর্তমান লেখাটির জন্ম।
১
ইতিহাসবিদ থুকুদিদিস—অনুমান করা হয়—দার্শনিক সক্রাতেসের চেয়ে বয়সে আট-দশ বৎসরের ছোট হবেন। হজরত ইসার আগের পঞ্চম শতকে তাঁরা দুজনই প্রাণধারণ করতেন। থুকুদিদিস সক্রাতেসের মতন খ্যাতির অধিকারী নন। কিন্তু রাজনীতি ও যুদ্ধবিগ্রহের ইতিহাস বিষয়ে যাঁদের খানিক হলেও আগ্রহ, তাঁরা তাঁর লেখার কদর করেন।
ইংরেজ দার্শনিক হব্স থুকুদিদিসের বই—পেলোপোনেশিয়ার যুদ্ধের ইতিহাস—ইংরেজিতে তর্জমা করেন। (শ্লাত্তার ১৯৭৫) একালের দার্শনিকদের কারও কারও মতে হব্সের রাষ্ট্রকল্পনা থুকুদিদিসের অনুগামী। (ওয়ালজার ১৯৯২: ৪) কেউ কেউ মনে করেন, থুকুদিদিসের চিন্তায় নতুন কথা নাই—তিনি মানুষের নীতি, সভ্যতা ও রাষ্ট্র বিষয়ে খালি হতাশা আর নিরাশার কথাই শুনিয়েছেন। (ফিনলে ১৯৭৭: ৪৮-৫৯)
আমাদের চোখে থুকুদিদিসের লেখার অন্য এক মূল্য ধরা পড়েছে। তাঁর বিশ্বাস, মানুষের ইতিহাসে একবার যা ঘটে তা হুবহু না হোক, আকারে প্রকারে আরো বহুবার ঘটতে পারে। কেতাবি ভাষায়, ইতিহাসের আবৃত্তি আছে। (থুকুদিদিস ১৯৫১: ১৪)
এই দাবি যদি আট আনাও সত্য হয়, তো থুকুদিদিস সাহেবের লেখা ইতিহাসের একটি ঘটনার আলোকে আফগান মুলুকের উপর মার্কিন জবরদস্তির বিচার যৎকিঞ্চিত করা যায়। আমার মনে হয়েছে প্রাচীন গ্রিক জাহানের পরাশক্তি আথেনস তার এককালীন মিত্র ক্ষুদ্র মিতুলেনি রাজ্যের সঙ্গে যে আচরণ করেছিল, বর্তমান দুনিয়ার বাদশাহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সাবেক মিত্র আফগান দেশের সঙ্গে একই ব্যবহার করছে।
এই তুলনা কতখানি আকাশ-কুসুম তার উপরই নির্ভর করছে আমাদের এই লেখার আসল উদ্দেশ্য পূরণের সম্ভাবনা। আথেন্স রাষ্ট্রে জননেতারা মিতুলেনির সকল সাবালক পুরুষ হত্যার এবং তাবৎ শিশু ও নারী বিক্রয়ের পক্ষে যে যুক্তি দিয়েছিলেন থুকু সাহেব তা সম্পাদিত ভাষায় নকল করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি হিসাবেও এই বিবরণ পাঠ করা যায়—এ প্রস্তাব এই অধম লেখকের।
যুদ্ধের কারণ দুই প্রকার—বলেছিলেন থুকুদিদিস। এক প্রকার কারণের নাম সাক্ষাৎ বা আশু কারণ, আরেক প্রকারের পরিচয় তিনি দেন—সত্য বা সুদূর কারণ নামে। থুকুদিদিস যে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা সম্বল করে এই বিচারকথা প্রচার করেন, আজকালকার ইতিহাস লেখকরা তারই নাম দিয়েছেন পেলোপোনেশিয়ার যুদ্ধ।
প্রাচীন যবনদেশের এক অংশ পেলোপোনেশিয়া নামে খ্যাত ছিল। সেই অংশের প্রধান ক্ষাত্রশক্তি স্পার্তা নামক রাষ্ট্র। এই স্পার্তার সঙ্গে নতুন পরাশক্তি আথেন্সের অনেক বছরের সংঘাতকেই ইতিহাসে পেলোপোনেশিয়ার যুদ্ধ বলার রীতি। নামেই প্রকাশ থুকুদিদিস আথেন্সপক্ষীয় মানুষ। তবে তাঁর সম্মানে অন্তত এইটুকু বলা দরকার—নিরপেক্ষতার ভান তিনি করেন নাই। বইয়ের প্রথম রুকুতেই থুকু সাহেব বলেছেন, আমি আথেন্সের লোক, এই যুদ্ধের ইতিহাস লিখতে বসেছি। নিজ দেশ বা নিজ দল বলে তিনি আথেন্সকে ছেড়ে কথা বলেননি। তাই আমরা তাঁর লেখার কদর করতে আজও কসুর করি না।
মিতুলেনির ভাগ্যনির্ধারণ সভায় আথেন্সের দুই রাজনীতিবিদের যে কাহিনী তিনি নকল করেছেন তা আমাদের মূল ও মূল্যবান ভরসা। থুকুদিদিসের এই দিলখোলা কথাবার্তা বর্তমান যুগের মার্কিন দার্শনিক মাইকেল ওয়ালজার দেখলাম খুব একটা পছন্দ করেন নাই। (ওয়ালজার ১৯৯২: ৪-১৩)
কোন প্রকার রাখঢাক না করে বা চাতুরির আশ্রয় না নিয়ে থুকুদিদিস বলেছেন, পেলোপোনেশিয়ার যুদ্ধের সত্য কারণ আথেন্সের সাম্রাজ্য-বিস্তার নীতি। দুটি করদ রাজ্যের বিরোধ নিয়ে এই বিবাদ শুরু হলেও সেটিই সত্য কারণ নয়—থুকুদিদিস সাহেব এই বিশ্লেষণে অটল। তাঁর ভাষায়:
পণ্ডিতদের আলোচনায় যুদ্ধের যে কারণ সবচেয়ে কম গুরুত্ব পায়, আমার বিচারে যুদ্ধের সত্য কারণ সেটাই। আথেন্সের ক্ষমতার বাড় বাড়া এবং সেই বাড়ায় লাকিদেমনের (মানে স্পার্তার) ভয় পাওয়া—এই দুই কারণে যুদ্ধ না লাগা অসম্ভব হয়ে ওঠে। [১]
থুকুদিদিস সাহেবের এই বিভাজন ইতিহাস লেখকরা পরকালেও বড় সহি জিনিস বলে আদর করেছেন—যেমন এয়ুরোপীয় মহাযুদ্ধের মার্কিন ইতিহাস লেখক ফে সাহেব থুকুদিদিসের ভূয়সী তারিফ করেন। (ফে ১৯৭৫: ১)
আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সমিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরব্ধ সমর প্রয়াসের বেলায়ও থুকুদিদিসের বিভাজন খাটানো সম্ভব। প্রশ্ন তোলা যায়: এই যুদ্ধের সত্য বা সুদূর কারণ কী?
খ্রিস্টীয় ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এক সুন্দর সকালের নির্মেঘ আকাশ ছেড়ে কয়েকটি অসামরিক বিমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি অসামরিক দালান ও একটি সদর দফতরে হামলা চালাল আর ৭ অক্টোবর নাগাদ কাবুল-কান্দাহারের মাটি মার্কিন বোমায় উড়ে গেল। ইতিহাস লেখক বা সংবাদ জগতের পরিচালকরা যদি এই সুবাদে ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনাকেই এই যুদ্ধের আশু বা সাক্ষাৎ কারণ বলেন তো অন্যায় হয় না। অন্যায় হয় যদি তাঁরা এই ঘটনাই যুদ্ধের সত্য কারণ বলে দাবি করেন।
ইসাবি ১৯১৪ সালের ২৮ জুন উপনিবেশ বসনিয়ার সারায়েভো শহরে মালিক সাম্রাজ্য অস্ট্রিয়ার ভাবী সম্রাট সস্ত্রীক রাজনৈতিক প্রতিবাদীর গুলিতে প্রাণ দিলেন আর আগস্ট মাসের ৪ তারিখ নাগাদ দুই পরাশক্তি—জার্মানি আর ইঙ্গভূমি—মহাযুদ্ধে নেমে গেল। সেই যুদ্ধ সাড়ে চার বছর স্থায়ী হল। দুই দলে খুন কিংবা জখম হল তিন কোটির মত মনুষ্য। অস্ট্রিয়ার ভবিষ্যৎ সম্রাটের জীবন মহান ও মূল্যবান। এ সত্যে সন্দেহ করলেও গোনাহ হয়, সন্দেহ নাই। কিন্তু এয়ুরোপীয় মহাসমরের কারণ এইটুকুন বললে খুব একটা সওয়াবও হয় না। এই কারণ অকিঞ্চিৎকর।
২
একই প্ররোচনায় আমরাও বলব, ১১ সেপ্টেম্বরই মধ্য এশিয়ায় মার্কিন অভিযানের প্রকৃত বা সত্য কারণ নয়। আফগান শাসকরা সৌদি আরবি বাদশাহের প্রজা ওসামা এবনে লাদেনকে ঠাঁই দিয়েছে। মার্কিন উপরোধ উপেক্ষা করে তাকে রেহাই দিয়েছে, পাকড়াও করে তাদের হাতে তুলে দেয়নি। তাই আমরা আফগান বেটাদের উপর চড়াও হয়েছি—যুক্তিবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই কৈফিয়ত দয়া করেই দিয়েছে। না দিলেও কারও কিছু বলার ছিল না।
ওদিকে আবার সাবেক রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন প্রচার করেছেন—১১ সেপ্টেম্বর তারিখের অনেক আগেই তিনি শ্রীমান লাদেনকে খুন করার হুকুম জারি করে বসেছিলেন। এই সেই ক্লিনটন যিনি কোন দিন কোন মিথ্যাকথা বলেন নাই। তাই পৃথিবীও তাঁহার কথা অবিশ্বাস করে নাই।
তার প্রমাণও মেলে সুদানে, সোমালিয়ায়, এরাকে এবং (বলা বাহুল্য) খোদ আফগান দেশে। তো বলা চলে, লাদেন-বিরোধী অভিযানের ইতিহাসে ১১ সেপ্টেম্বর একটি বাড়তি অধ্যায় বৈ নয়। বাংলায় বলি, কারণ-বোঝার উপর করুণ-শাকের আঁটি। তবু প্রশ্ন থেকেই গেল: খুদে আফগান জাতির উপর মহান দেশের এই মহা গোস্বার সত্য কারণ কী?
যুক্তরাষ্ট্র বার বার বলেছে—তাদের যুদ্ধ ক্রুসেড বটে, তবে এ ক্রুসেড সে ক্রুসেড নয়। এর প্রতিপক্ষ আফগান জাতি নয়, শুদ্ধ তালেবান শাসকগণ। এর প্রতিপক্ষ এসলাম ধর্ম নয়, (এসলাম মার্কা) সন্ত্রাসবাদ মাত্র। আমেরিকার এই কথা ও তার যুদ্ধপ্রয়াসের মধ্যে সঙ্গতি আবিষ্কারের চেষ্টা শতাব্দীর মনীষার কাজ, সন্দেহ নাই। রাষ্ট্রপতি বুশ বলেন: সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে তাঁর দেশের অভিযানের মাঝখানে দাঁড়াবার অধিকার কারও নাই। পয়গম্বর হজরত ইসা এবনে মরিয়মের বাক্য উদ্ধার করে তিনি বলেন, যারা আমাদের পক্ষে নাই তারা আমাদের শত্রুপক্ষের লোক। (কিতাবুল মোকাদ্দস ২০০০: সিপারা মথি, ১২: ৩০)
এ কথার অর্থ ভয়াবহ। এমন ভয়াবহ যে আমাদের পক্ষে এর অর্থ হজম করাও কঠিন। এই কথায় নির্গলিতার্থ: আমরা সারে জাহাঁর বিরুদ্ধে জঙ্গ ঘোষণা করলাম। ভয়ে বা প্রলোভনে পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ প্রভৃতি রাষ্ট্র এর মধ্যেই মার্কিন জোটে যোগ দিয়েছে। যারা দেয় নাই যুক্তরাষ্ট্র এখন ইচ্ছা করলে তাদের ঘাড়েও সিন্দাবাদের দৈত্যের মতন লাফ দিয়ে বসতে পারে। তো সামান্য লাদেনের শাক ঢাকতে কেন এত মাছের আমদানি? কেন কামান দাগতে এই মশার চাষ, মশাই? কেন আমেরিকা বনাম পৃথিবীর এই আড়াই নম্বর বিশ্বযুদ্ধ?
কারণ, আমাদের বিবেচনায়, বিদ্রোহ। আফগানরা একদিন মার্কিন দেশের মিত্র ছিল। এখন বিদ্রোহ করছে। এ বিদ্রোহ মেনে নেওয়া যায় না। আফগানিস্তানের মতন নগণ্য কোন দেশ জোটের বাইরে গেলে ছাইপাঁশ আসে যায়। কিন্তু উদাহরণের শক্তি অপরিমেয়। ক্ষুদ্র আফগান দেশ যদি উদাহরণ স্থাপনের সুযোগ পায়, তো কাল বড়সড় দেশ সৌদি আরবও যে সেই পথ ধরবে না তার কসম কোথায়? মার্কিন সাম্রাজ্যের আজ আর কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নাই। আজ সে নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী।
তবু কেন এমন নিষ্ঠুরতা? কেন তার শরণ নিতে আজ সে পিছ পা হচ্ছে না? দুনিয়ার আর দশ দেশকে শিক্ষা দেওয়াই আফগানিস্তানে মার্কিন যুদ্ধের প্রধান কারণ। এই দরিদ্র দেশের সঙ্গে কোন প্রকার আলাপ-আলোচনায় বসাও আমেরিকার মর্যাদার সঙ্গতিপূর্ণ নয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও তার মিত্রদের জবরদস্তির এবং আত্মগরিমার এটাই আশু কারণ। এর সুদূর মূল এই সাম্রাজ্যের ভিত্তিতে বটে। সারা পৃথিবীর প্রাণ না নিয়ে আজ এ সাম্রাজ্য আয়ুর নিশ্চয়তা নিতে পারছে না।
আথেন্সেরও এই রোগ হয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৪৯০ এবং ৪৮০ সনে—যথাক্রমে মারাথন ও সালামিসের যুদ্ধে ইরানের বিরুদ্ধে গ্রিক জাতির যুদ্ধজোট জয়ী হয়। এই বিজয়ের নেতৃত্ব দেয় নতুন পরাশক্তি আথেন্স। যুদ্ধ শেষ হয়, কিন্তু জোট শেষ হয় না। আথেন্সের পতাকাতলে প্রায় ১৫০টি ছোট ছোট রাষ্ট্র সমবেত হয়। এই মিত্রদের সঙ্গে আথেন্সের সম্পর্ক কেমন ছিল সে নিয়ে ইতিহাস লেখকরা এখনো তর্ক করেন। কিন্তু কয়েকটা বিষয় স্পষ্ট। জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার স্বাধীনতা কাউকে দেওয়া হয়নি। যদি কোন রাষ্ট্র আথেন্সের জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তো তাকে বিদ্রোহী আখ্যা দিয়ে শায়েস্তা করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৪৭৮ সনের দিকে এই জোটের আত্মপ্রকাশের প্রায় ৪৬ বছর পর পুরনো পেলোপোনেশীয় জোটের সঙ্গে তার যুদ্ধ। যুদ্ধ বাধার চার বছর পর ক্ষুদ্র রাষ্ট্র মিতুলেনি জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন আথেন্স তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের যে নীতি গ্রহণ করেছিল—আমাদের মনে হয় তার সঙ্গে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত প্রতিশোধ ও ত্রাসনীতির মিল আছে। আশা করি আফগানিস্তানে মার্কিন-পাশ্চাত্য যুদ্ধের আসল কারণ কী তার কিছু ইঙ্গিত এই বিশ্লেষণের ভিতর পাওয়া যাবে।
অনেকদিন ধরে লড়বার পর মিতুলেনির সরকার আথেনসীয় বাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করে। থুকুদিদিসের মতে, আথেনসীয় বাহিনীর অবরোধের মুখে একদিকে খাদ্যবস্তুর ঘাটতি দেখা দেয়, অন্যদিকে স্পার্তার দলের প্রতিশ্রুত সাহায্যও এসে পৌঁছে না। ওদিকে সশস্ত্র জনসাধারণ খাদ্য গুদাম খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে। সব মিলিয়ে আত্মসমর্পণ বাদে সরকারের অন্য গতি থাকে না। আত্মসমর্পণ চুক্তির শর্ত অনুসারে মিতুলেনির একদল দূত খোদ আথেন্স নগরী গিয়ে বিষয়টির চূড়ান্ত ফয়সালা করবেন। তারা ফিরে না আসা পর্যন্ত আথেনসের বাহিনী কোন মিতুলেনীয় নাগরিকের প্রাণহানি করবে না। কিন্তু আথেনসীয় বাহিনীর অধিপতি—পাখেস তার নাম—বিদ্রোহের নেতাদের বন্দি অবস্থায় আথেন্সে পাঠিয়ে দেন। বন্দিদের মধ্যে স্পার্তার একজন প্রতিনিধিও ছিলেন। (থুকুদিদিস ১৯৫১: ১৬৩)
বন্দিরা আথেন্স পোঁছামাত্রই স্পার্তার প্রতিনিধিকে হত্যা করা হয়। আথেন্সের জাতীয় পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয়, শুদ্ধ যুদ্ধবন্দি হিসাবে আনীতদেরই নয়, মিতুলেনির সকল প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষেরও প্রাণদণ্ড দিতে হবে। নারী আর শিশুদের করতে হবে দাস। এই দণ্ড কার্যকর করার উদ্দেশ্যে একদল দূত তৎক্ষণাৎ নৌপথে মিতুলেনি যাত্রা করেন।
কিন্তু পরদিন আথেনসীয় নাগরিকদের একাংশ বিষয়টি পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব তোলে। কারণ দায়ী-নির্দায়ী নির্বিশেষে কোন রাষ্ট্রের সকল মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত অনেকের কাছে অতিরিক্ত নিষ্ঠুর মনে হয়। পরদিনের এই বিতর্কে অংশ নেন কট্টরপন্থী সেনাপতি ক্লেয়ন (এবনে ক্লেয়েনেতুস) এবং নরমপন্থী পক্ষে দিয়োদোতুস (এবনে এয়ুক্রাতেস)। ভোটাভুটিতে শেষমেশ গণ মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল হয়। অনেক মিতুলেনিবাসীর প্রাণ বাঁচে। (থুকুদিদিস ১৯৫১: ১৭২) তবে প্রায় এক হাজার বন্দির প্রাণদণ্ড কার্যকর হয় এবং দেশটি পুরোপুরি পরিণত হয় আথেন্সের উপনিবেশে।
মিতুলেনির সকল পুরুষ নাগরিকের প্রাণদণ্ড কেন দেওয়া উচিত? এই প্রশ্নের উত্তরে সেনানায়ক ক্লেয়ন আথেন্সের জাতীয় পরিষদে যে বক্তৃতা দেন তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সভায়ও দেওয়া সম্ভব। শুদ্ধ মিতুলেনি শব্দটি কেটে তার জায়গায় আফগানিস্তান বা অন্য যে দেশের নাম ইচ্ছা হয় দিতে পারেন। ক্লেয়ন বলেন:
যারা আমাদের সাম্রাজ্যের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কিংবা দুশমনদের উস্কানিতে মুগ্ধ হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তাদের না হয় আমরা ক্ষমা করতে পারি। কিন্তু যারা সুরক্ষিত দুর্গসহ দ্বীপে বসবাস করে আসছে, সমুদ্রপথ ছাড়া যাদের উপর আমাদের শত্রুরা হামলা করতে পারে না, যাদের নিজস্ব নৌ-যুদ্ধযান মজুদ আছে, যারা স্বাধীন এবং আপনাদের চোখে সম্মানের পাত্র ছিল—তারা যদি এমন কাজ করে তবে তাকে বিদ্রোহ বলা সত্যের অপলাপ। কারণ বিদ্রোহ বলতে অত্যাচারের অস্তিত্ব নির্দেশ করে।
এদের কাজটিকে সজ্ঞান ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আগ্রাসন ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। এরা আমাদের শত্রুপক্ষে যোগ দিয়ে আমাদের সর্বনাশ সাধনের চেষ্টা করেছে। তারা নিজেরা ক্ষমতাধর হওয়ার চেষ্টা করলে যে অন্যায় হত এই অন্যায় তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি। তাদের যে প্রতিবেশীরা বিদ্রোহ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে, তা থেকে তারা কোন শিক্ষাই গ্রহণ করেনি। নিজেদের ধনসম্পদ থাকা সত্ত্বেও তারা ঝুঁকি নিতে পিছ পা হয়নি। [২]
ক্লেয়ন দাবি করলেন, এদের এখন ‘যেমন কুকুর তেমন মুগুর’ দিতে হবে। পরিষদের উদ্দেশে তিনি বলেন:
অভিজাতদের শাস্তি দিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মাফ করবেন না। তারা সকলেই নির্বিচারে আপনাদের উপর হামলা চালিয়েছে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। তারা তো আমাদের পক্ষে যোগ দিয়ে, এতদিন নিজেদের দেশের মালিক হতে পারত। কই তারা তো তা করেনি। তারা আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যোগ দিয়েছে, অভিজাতদের পিছনে কাতার বেঁধেছে। [৩]
ক্লেয়নের এই যুক্তিকে একালের দার্শনিকরা বলবেন, ‘জাতীয় অপরাধের যুক্তি’। ক্লেয়নের অপর যুক্তি: অপরাধ অনুসারে সাজা দিতে হবে। যদি না দিই তো সমূহ বিপদ। তিনি বলেন:
ভেবে দেখুন। যে মিত্র শত্রুর চাপে বাধ্য হয়ে বিদ্রোহ করল এবং যে নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় বিদ্রোহ করল তাদের উভয়কে যদি একই শাস্তি দেন তাহলে—ভাবতে পারেন!—সামান্যতম ছুঁতো পেলেই কে না বিদ্রোহে এগিয়ে আসবে! যেখানে সাফল্যের পুরস্কার স্বাধীনতা আর ব্যর্থতার শাস্তি তেমন ভয়ের কিছু নয়—সেখানে পরিস্থিতি কেমন হবে একবার ভেবে দেখুন তো! [৪]
ক্লেয়নের হিসাব মোতাবেক:
আমরা রাষ্ট্রের পর রাষ্ট্রের বিদ্রোহ দমন করতে আমাদের পয়সা আর প্রাণ রাখব আর জিতলে পাব ধ্বংসপ্রাপ্ত এমন সব দেশ যা থেকে যুদ্ধের খরচাও উঠে আসবে না। আর যদি ব্যর্থ হই তো কামাই হবে চিরস্থায়ী একটা শত্রু। ফলে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই শিকায় তুলে আমাদের পুরানো মিত্রের সঙ্গে লড়ে সময় কাটাতে হবে। [৫]
ক্লেয়নের এই যুক্তিধারার বিরুদ্ধে যিনি পাল্টা যুক্তি পেশ করেন তিনি দিয়োদোতুস। তাঁর মতে মৃত্যদণ্ড দিয়ে বিদ্রোহ দমন করা যায় না। তাঁর বক্তৃতার কিয়দংশ থুকুদিদিস এভাবে পেশ করেন:
সে যাই হোক, আমি মিতুলেনির মামলায় পক্ষে বা বিপক্ষে সাফাই গাইতে আসি নাই। কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ হিসাবে আমাদের বিচার্য বিষয় ওদের অপরাধ নয়, আমাদের স্বার্থ। হাতে নগদ প্রমাণ পেলেও আমি ওদের প্রাণদণ্ড চাইব না, যদি না তাতে আমাদের স্বার্থ সাধিত হয়। আর ওদের প্রশ্রয় দেওয়ার পরামর্শ আমি দেব না, যদি না তাতে আমাদের দেশের স্বার্থ রক্ষা পায়। [৬]
দিয়োদোতুস বললেন: ‘মনে রাখবেন, আমাদের এই পরিষদ আদালতের কক্ষ নয়, আমাদের কাজ রাজনৈতিক। বিষয়টা ন্যায় বা অন্যায়ের নয়, বরং মিতুলেনিদের কিভাবে আথেন্সের কাজে লাগানো যায় তা।’ [৭]
৩
পেলোপোনেশিয়ার যুদ্ধ মোট সাতাশ বছর জারি ছিল। শুরু হয়েছিল আলায়হেস সালাম হজরত ইসার ৪৩১ বৎসর আগে, শেষ হয় ইসার আগের ৪০৪ বছরে। মাঝখানে সাত বৎসরের একটা বিরতির হিসাবও এর ভিতরে ধরা আছে। এই যুদ্ধের শেষ ফলাফল কী দাঁড়িয়েছিল তা বাংলাদেশের জ্ঞানী পাঠিকা জানেন। যবনজাতির গৌরব আথেন্সের পতন ঘটে এই যুদ্ধে। তার সাম্রাজ্য নষ্ট হয়। যুদ্ধের শেষটা কী হয়েছিল সে কথা অবশ্য লিখে যাবার সময় থুকুদিদিস পাননি। কিন্তু এই হত লঙ্কার বিস্তর ইঙ্গিত তিনি তার বইতে দিয়েছেন। এর পিছনে মিতুলেনির মত একটি হত রাষ্ট্রের কী ভূমিকা! রাজনীতি বা যুদ্ধনীতির মাপে হয়তো কিছুই নয়। কিন্তু নীতিরাজ বা নীতিযুদ্ধের বিচারে এই ভূমিকা বিরাট।
সেবার—পেলোপোনেশিয়ার যুদ্ধের চতুর্থ ও পঞ্চম বৎসরে—কপালগুণে মিতুলেনির বাদবাকি লোকজন প্রাণে রক্ষা পায়। মার্কিন দার্শনিক ওয়ালজার মনে করেন, এই কপালের জোর নিছক ভাগ্য নয়। এর পিছনের কারণ আথেন্সের গণতন্ত্র। প্রথম দিন অভিজাত-সাধারণ, বিদ্রোহী-শান্তিবাদী নির্বিশেষে সবাইকে প্রাণদণ্ড আর নারী ও শিশুদের দাসত্বদণ্ড বিধান করায় যাঁরা ব্যথিত হয়েছিলেন তাঁরা গণতান্ত্রিক আথেন্সের নীতিবাদী নাগরিক। এঁদের যুক্তির জোরেই মিতুলেনির প্রাণ রক্ষা পায়। (ওয়ালজার ১৯৯২: ১১)
ওয়ালজার সাহেবের মতে, বিদ্রোহীকে শাস্তি দেওয়া নিষ্ঠুরতা নয়, সেটা ন্যায়সঙ্গত। শুদ্ধ নির্বিচারে মানুষ মারাই নিষ্ঠুরতা। ক্লেয়ন সেই নিষ্ঠুরতার সাক্ষাৎ প্রতিমূর্তি। ওদিকে ক্লেয়নের বিরোধী দলের নেতা দিয়োদোতুসও নীতির দোহাই দিয়ে নয়, আথেন্সের স্বার্থের খাতিরে—স্বার্থ কা ওয়াস্তে—মিতেলেনির প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছেন। তাহলে নীতি কোথায়? আমরা কি এই কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য যে এই ভূমণ্ডলে নীতি বলতে কিছু নাই? কেবলই স্বার্থ আছে অখিল ভুবনে, নাই আর কিছু?
যদি নাই থাকে নীতির বালাই—তো এত নীতিকথা কেন? আমেরিকা তো ইচ্ছা হলে বলতেই পারে, আমরা ক্ষমতাবান, তোমরা ক্ষমতাহীন—আমাদের আজ্ঞা পালনই তোমাদের কর্তব্য। তা না বলে আমেরিকা কেন বলে: ন্যায় আমাদের পক্ষে? বাঘ কেন ভেড়ার বাচ্চাকে বলে: ‘তুমি আমার পানি আউলা করছ!’ বেকুব ভেড়ার বাচ্চা যদি বলে: ‘কই হুজুর, আমি কি কইরা আপনের পানি আউলা করুম? আমি তো এই দিকে নিচে খাড়াইয়া আছি।’ বাঘ মহাশয় কি শুনতে বাধ্য?
আমাদের প্রশ্ন: বাঘেরও কেন একটা যুক্তি দরকার? সম্ভবত লা ফঁতেন নামক এক কবির পাল্লায় না পড়লে বাঘকেও এ দর্শন প্রচার করতে হত না। (লা ফঁতেন ১৯৭৯: ১১) ক্লেয়নও করেননি। দ্বিতীয় দিনের বক্তৃতায় তিনি পরিষ্কার বলেন: ‘আমি এর আগেও বহুবার বলেছি কোন দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু রেখে সাম্রাজ্য রাখা যায় না। মিতুলেনির বিষয়ে আপনারা এই যে দোমনা হচ্ছেন তা দেখে আমার এ বক্তব্য আরো বলবান হল।’ (থুকুদিদিস ১৯৫১: ১০৩-০৪) আমেরিকায় গণতন্ত্র আছে। কিন্তু সে গণতন্ত্র রাজার নতুন জামার মত। খালি চোখে দেখা যায় না।
আফগানিস্তানে আমেরিকার নিষ্ঠুরতাকে অনেকের মনে হবে ‘ন্যায়বিচার’। সন্ত্রাস দমনের অপরিহার্য আনুষঙ্গিক ক্ষয়ক্ষতি। আবার অন্য অনেকের মনে হবে এই সন্ত্রাসের সত্য কারণ আমেরিকার সাম্রাজ্য। সাম্রাজ্যটা কেটে বাদ দিলে আফগান আর আমেরিকান জনগণের কোন বিবাদ নাই। সাম্রাজ্য আছে। তাই যুদ্ধ আছে। কারও কাছে এই যুদ্ধ স্বাভাবিক, সুতরাং সঙ্গত। আর কারও কাছে এ যুদ্ধ সাম্রাজ্যের ফল, অতয়েব নিষ্ঠুর।
আমেরিকার হাত থেকে আফগানিস্তান কি রেহাই পাবে? পেলে তা কিভাবে? হয় খোদ আমেরিকার নীতি বদলালে, নয় আফগান সরকারের পতন ঘটলে। আমেরিকার নীতি দুই চার দশ বছরে বদলানোর সম্ভাবনা যখন নাই তখন ধরে নেওয়া যায় আফগানিস্তানে সরকার বদলাবে। কিন্তু মার্কিন নিষ্ঠুরতার কি অবসান ঘটবে তাতে?
ইতিহাসের সাক্ষ্য-প্রমাণের বিলাসিতায় যদি আরো একটু গা ভাসানোর অনুমতি পাই তো বলি, পেলোপোনেশীয় যুদ্ধের ষোল নম্বর বৎসরে আরেক ক্ষুদ্র রাজ্য মেলোসের কপালে কী ঘটেছিল তার বিবরণ পড়া যাক। কিন্তু এখানে আমার আর লেখার সুযোগ নাই। সংক্ষেপে লিখি: মেলোস দ্বীপের সকল মনুষ্য হয় নিহত, না হয় দাস হয়েছিল। তবুও আথেন্সের সাম্রাজ্য রক্ষা পায় নাই। এর গভীর কারণ থুকুদিদিস আলোচনা করেছেন।
জার্মান মনীষী কার্ল মার্কস সমকালীন বোদলেয়ারের কাছাকাছি সময় লিখেছিলেন, মনুষ্যজাতির ইতিহাসের ঘটনা একবারই মাত্র ঘটে না, বার বারই ঘটে। তবে তাঁর মতে, প্রথমবার যদি ঘটে বিধির বিধান বা ট্রাজেডি আকারে, দোসরাবার ঘটে প্রহসন বা হাসির খোরাক হিসাবে। (মার্কস ১৯৭৯: ১২)
নাপোলেয়ঁ বোনাপার্তের নাম ভাঙ্গিয়ে তাঁর ভাতিজার ক্ষমতাদখলের পর মার্কস এই মন্তব্য করেছিলেন।
আথেন্স সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়েছিল বিধির বিধান অনুসারে। তবে কি মার্কিন সাম্রাজ্য নষ্ট হবে প্রহসনে? মার্কিন সাম্রাজ্যের ভাগ্য নিয়ে উদ্বেগের কারণ আছে। খুব সম্ভবত আফগানিস্তান তার শেষ অপরাধ নয়। আরো আছে। প্রবন্ধান্তরে আমরা তার বিচার করব।
আমিন। অতয়েব আমিন।
বোধিনী
১. ‘The real cause I consider to be the one which was formally most kept out of sight. The growth of the power of Athens, and the alarm which this inspired in Lacedaemon, made war inevitable.’ (Thucydides 1951: 15)
২. ‘I can make allowance for those who revolt because they cannot bear our empire, or who have been forced to do so by the enemy. But for those who possessed an island with fortifications; who could fear our enemies only by sea, and there had their own force of galleys to protect them; who were independent and held in the highest honour by you—to act as these have done, this is not revolt—revolt implies oppression; it is deliberate and wanton aggression; an attempt to ruin us by siding with our bitterest enemies; a worse offence than a war undertaken on their own account in the acquisition of power. The fate of those of their neighbours who had already rebelled and had been subdued, was no lesson to them; their own prosperity could not dissuade them from affronting danger; but blindly confident in the future, and full of hopes beyond their power though not beyond their ambition, they declared war and made their decision to prefer might to right, their attack being determined not by provocation but by the moment which seemed propitious.’ (Thucydides 1951: 165–66)
৩. ‘Let them now therefore be punished as their crime requires, and do not, while you condemn the aristocracy, absolve the people. This is certain, that all attacked you without distinction, although they might have come over to us, and been now again in possession of their city. But no, they thought it safer to throw in their lot with the aristocracy and so joined their rebellion!’ (Thucydides 1951: 166)
৪. ‘Consider therefore! if you subject to the same punishment the ally who is forced to rebel by the enemy, and him who does so by his own free choice, which of them, think you, is there that will not rebel upon the slightest pretext; when the reward of success is freedom, and the penalty of failure nothing so very terrible?’ (Thucydides 1951: 166)
৫. ‘We meanwhile shall have to risk our money and our lives against one state after another; and if successful, shall receive a ruined town from which we can no longer draw the revenue upon which our strength depends; while if unsuccessful, we shall have an enemy the more upon our hands, and shall spend the time that might be employed in combating our existing foes in warring with our allies.’ (Thucydides 1951: 166)
৬. ‘However, I have not come forward either to oppose or to accuse in the matter of Mitylene; indeed, the question before us as sensible men is not their guilt, but our interests. Though I prove them ever so guilty, I shall not, therefore, advise their death, unless it be expedient; nor though they should have claims to indulgence, shall I recommend it, unless it be clearly for the good of the country.’ (Thucydides 1951: 169)
৭. ‘…but we are not in a court of justice, but in a political assembly; and the question is not justice, but how to make the Mitylenians useful to Athens.’ (Thucydides 1951: 169)
দোহাই
১. কিতাবুল মোকাদ্দস (ঢাকা: বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি, ২০০০)।
২. কার্ল মার্কস, ‘লুই বোনাপার্টের আঠারই ব্রুমেয়ার,’ কার্ল মার্কস ও ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস, নির্বাচিত রচনাবলি, ৪র্থ খ- (মস্কো: প্রগতি প্রকাশন, ১৯৭৯)।
৩. Charles Baudelaire, Flowers of Evils and Other Works, ed. W. Fowlie (New York, 1964/ka).
৪. S. B. Fay, The Origins of the World War, 2nd ed., rep. (New Delhi, 1975).
৫. M. I. Finley, Aspect of Antiquity: Discoveries and Controversies (Harmondsworth, UK, 1977).
৬. La Fontaine, Selected Fables, trans. J. Michie (Harmondsworth, UK: Penguin Books, 1979).
৭. Richard Schlatter, ed., Hobbes’ Thucydides: History of the Peleponnesian War (New Brunswick, NJ, 1975).
৮. Thucydides, The Complete Writings of Thucydides: The Peloponnesian War, trans. R. Crawley, ed. J. H. Finley, Jr. (New York: Modern Library, 1951).
৯. Michael Walzer, Just and unjust wars, 2nd ed. (New York, 1992).
স্যার আমি ইতিহাসের একজন ছাত্র ।বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যারের নিকট ও টেক্সট বই থেকে কোনদিন এই ইতিহাস পড়তে পারিনি যা আপনার এই প্রবন্ধে পড়লাম।আপনার এই রকম ইতিহাস ভিত্তিক প্রবন্ধ সোসাল মিডিয়ায় প্রচার করলে আমরা উপকৃত হব বিশেষ করে যাদের বই পড়ার ইচ্ছা আছে কিন্তু বই কেনার সামর্থ্য নেই । আপনার প্রবন্ধ পড়তে যেয়ে আর একটি শব্দের অর্থ আজকে জানলাম।শব্দটি হল লিবারেলিজম ।আমার এনজিওর চাকরি চলাকালীন এই শব্দের অর্থ আমার কাছে ছিল উদারতাবাদ। কিন্তু আপনার থেকে শিখলাম স্বাধীনতা – ব্যবসায়ী । আমি এনজিওর এই লিবারেলিজম থিওরির ঘোর বিরোধী তাই মার্কিন মদতপুষ্ট ব্র্যাকের চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। অথচ আমাদের দেশের বামপন্থী ও সিভিল সোসাইটি সকলেই এই এনজিও কে সমর্থন করেন ।এমনকি বাঘা বুদ্ধিজীবী ও বড় বড় নামকরা পত্রিকার সম্পাদক সাহেবরা।
তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা।