সাক্ষাৎকার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থান: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

Spread the love

‘জুলাই আন্দোলনের এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শিরোনামে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছিল প্রথম আলো। আলোচক ছিলেন লেখক ও জনবুদ্ধিজীবী অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, তরুণ গবেষক মীর হুযাইফা আল মামদূহ এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সাবেক সমন্বয়কারী ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নাজিফা জান্নাত। গত ১৫ জুলাই রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গোলটেবিল বৈঠকের সঞ্চালক ছিলেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ

‘জুলাই আন্দোলনের এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে (বাঁ থেকে) নাজিফা জান্নাত, জাহেদ উর রহমান, সলিমুল্লাহ খান, মীর হুযাইফা আল মামদূহ ও সাজ্জাদ শরিফ
‘জুলাই আন্দোলনের এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে (বাঁ থেকে) নাজিফা জান্নাত, জাহেদ উর রহমান, সলিমুল্লাহ খান, মীর হুযাইফা আল মামদূহ ও সাজ্জাদ শরিফছবি: তানভীর আহাম্মেদ। ১৫ জুলাই ২০২৫

সাজ্জাদ শরিফ

গত বছরের ডিসেম্বরে আমরা মোটামুটি এই কজন একসঙ্গে বসে ছিলাম। শুধু শিক্ষার্থী প্রতিনিধির বদল হয়েছে। সেই হিসেবে এবার যোগ দিয়েছেন নাজিফা জান্নাত। তখন যখন বসেছি, তার কয়েক মাস আগে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান হয়ে গেছে। এখন এক বছর পূর্ণ হলো। এই এক বছরে আমরা কোথায় এসে দাঁড়ালাম, তা নিয়ে আলোচনা করব।

জাহেদ উর রহমান

জাহেদ উর রহমান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
জাহেদ উর রহমান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর আমাদের প্রত্যাশা এত বেশি হচ্ছে যে এক বছর পর ওটাই মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে আমি দূর থেকেই তর্ক করছিলাম। কারণ, তিনি এ ঘটনাকে বিপ্লব বলার চেষ্টা করছিলেন। একে বিপ্লব বলার চেষ্টা থেকে আমাদের সংকট উদ্ভূত হয়েছে। কারণ, বিপ্লবের কাছে আমাদের অনেক বড় চাওয়া থাকে। বিপ্লবের পর সমাজ থেকে শুরু করে বহু জায়গার খোলনলচেই পাল্টে যায়। আমরা খেয়াল করেছি, এই গণ–অভ্যুত্থানের সামনের সারিতে যে ছাত্ররা ছিলেন, তাঁদেরও কেউ কেউ মনে করতে শুরু করলেন, এটা বিপ্লব ছিল। কেউ কেউ বলেছেন যে তাঁদের ভুল হয়ে গেছে—কেন তাঁরা বিপ্লবী সরকার তৈরি করেননি; কেন তখনই সংবিধান বাতিল করে দেননি; কিন্তু আমরা যদি বাস্তবটা মেনে নিয়ে একে গণ–অভ্যুত্থান হিসেবেই গ্রহণ করতাম, তাহলে অনেক কিছুই করতে পারতাম। আমাদের লক্ষ্য কম, কিন্তু সুনির্দিষ্ট থাকত। কারণ, গণ–অভ্যুত্থানের যা যা চাওয়া যায়, আমরা তা–ই চাইতাম। একটি শক্ত সরকার হতো, শক্ত প্রশাসক হতো। এখন কথা হলো, আমরা কি গণ–অভ্যুত্থানের কাছে যা যা চাওয়া যায়, তা কি পেয়েছি? উত্তর হচ্ছে, পাইনি।

পাইনি কারণ, রাজনীতির মাঠে প্রক্রিয়াশীল যে দলগুলো আছে, তারা প্রত্যেকে নিজেদের এজেন্ডা নিয়ে সক্রিয়। এ কারণে ৫ আগস্টের পর যে বিভেদ দেখা গেল, তাতে আমি খুব অবাক হইনি। গণতন্ত্রে আমরা বিতর্ক করব, ঝগড়াঝাঁটিও করব।

আমরা যখন সংস্কারের আলাপ করি, অনেক কিছু একসঙ্গে করে ফেলতে চাই। এটা সমস্যাজনক। সংস্কার কতটুকু দরকার বা আমরা কোন জায়গায় যেতে চাই, এসব নিয়ে আমার মনে হয় বড় দ্বিমত নেই; কিন্তু আমি মনে করি, এগুলো ধাপে ধাপে করা দরকার। আমরা যদি মনে করি, এবার পেয়েছি, সবকিছু ঠিকঠাক করে ফেলব, নতুন সংবিধান লিখে ফেলব, একসঙ্গে কতগুলো আইন বানিয়ে ফেলব; অনেকের ভাষায়, যাতে ফ্যাসিজম আর ফিরে না আসে; এটা বাস্তবসম্মত নয়।

পশ্চিমের দেশগুলোতে সুলিখিত সংবিধান আর দীর্ঘদিনের গণতন্ত্রের চর্চা থাকা সত্ত্বেও ফ্যাসিজম বা দক্ষিণপন্থী জনতুষ্টিবাদী ধারা মাথাচাড়া দিচ্ছে। এটা কেন ঘটছে, তা নিয়ে কি আলাপ হচ্ছে কোথাও? ফলে সংবিধান ঠিকঠাক করে লিখে ফেললেই কি আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারব যে ফ্যাসিবাদ আর কখনো মাথাচাড়া দেবে না? মোটাদাগে উত্তর হচ্ছে, না। সংবিধান লিখে বা সংশোধন করে সেটি রোধ করা যাবে না। এখন সমস্যা হলো, সব দলের টার্গেট বা এজেন্ডা এক নয়। বিএনপির মতো দল একেকটা আসনে মনোনয়ন দিতে গিয়ে হিমশিম খায়। আবার কোনো কোনো দল হিমশিম খায় মনোনয়ন দেওয়ার মতো লোক খুঁজে পায় না বলে। এই দলগুলোর চাওয়া তো এক হবে না। যে দল জানে যে তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে না, তাদের পক্ষে রঙিন ও অবাস্তব কথা বলা সহজ।

সংস্কার, বিচার বা নিরাপত্তা ঠিক না হলে নির্বাচনে যাব না—এসব দাবি রাজনৈতিক চাপের এজেন্ডা হলে ঠিক আছে; কিন্তু এসব দাবি তুলে কি নির্বাচন আটকে দেওয়া হচ্ছে? আমাদের বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট তথ্য ও যুক্তি আছে যে সরকারের ভেতরে ও বাইরের কিছু মানুষ নির্বাচন যতটা বেশি সম্ভব পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

আমি মনে করি, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার গঠন আবশ্যিক ছিল। আন্তর্জাতিক এবং সে সময়ের অভ্যন্তরীণ গ্রহণযোগ্যতা তাঁকে ছাড়া সম্ভব হতো না। কিন্তু এটাও সত্য যে এটি অত্যন্ত দুর্বল একটি সরকার হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধু দুর্বলতা নয়, সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ পক্ষপাত দেখিয়েছে, বিশেষ করে দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি। এক শর বেশি মাজার ভাঙা হয়েছে, বিভিন্ন ইস্যুতে নারীরা লাঞ্ছিত হয়েছেন, নাটক বন্ধ করা হয়েছে, বাউলগান বন্ধ করা হয়েছে, একজন নারী কীভাবে ওড়না পরবেন বা সিগারেট খাবেন কি না, সেটি নিয়ে কথা হয়েছে। এই ক্ষেত্রগুলোতে সরকার খুব একটা শক্ত অবস্থান নেয়নি। মনে হয়েছে, সরকারের মধ্যে কারও কারও এ নিয়ে এজেন্ডা আছে। তাঁরা হয়তো চেয়েছেন, মাঠের একটি বড় শক্তি বিএনপির বিরুদ্ধে দক্ষিণপন্থী এই গোষ্ঠীকে বিরোধী শক্তি হিসেবে মাঠে রাখতে।

ওদিকে সংস্কার নিয়ে বিরাট বিরাট কথা আসছে। ঐকমত্য কমিশনে জমা দেওয়ার আগে প্রথম ছয়টা কমিশনের অনেকগুলো সুপারিশ সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে, যেগুলো এমনিতেই করে ফেলা যায়, তার কিছুই করা হয়নি। প্রথম দিকে ঐকমত্য কমিশন বসার পর বেশ কিছু ঐকমত্য হয়েছে। সরকার সেগুলোও কার্যকর করেনি। পুলিশ সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট তো ঐকমত্য কমিশনের নেই। সরকার প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিয়ে সেসব করে ফেলতে পারে, হয়নি তো। ফলে এগুলোর প্রতি সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন আছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই এ প্রশ্ন আসে, সংস্কার শব্দটা কি হাসিনার উন্নয়নের মতো হয়ে গেল? হাসিনা উন্নয়নকে সামনে রেখে নির্বাচন ম্যানিপুলেট করতে চাইত, সরকার কি সংস্কারকে সামনে রেখে নির্বাচন পেছাতে চায়?

সবকিছুর পরও সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকা, ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, হাইকোর্টের বেঞ্চ জেলায় যাওয়া—এ রকম বেশ কিছু বিষয়ে বিএনপি একমত হয়েছে। এটিকে আমি আশা হিসেবে দেখি। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে যদি একমত হওয়া যায়, তাহলে আমি মনে করব, অনেক হয়েছে। এখন যদি আমরা এই আলাপ করি যে—না, আমার মতো করে না হলে আমি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব না; আমি নির্বাচনে যাব না বা নির্বাচনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করব—এগুলোই সংকট তৈরি করতে যাচ্ছে।

মীর হুযাইফা আল মামদূহ

মীর হুযাইফা আল মামদূহ
মীর হুযাইফা আল মামদূহতরুণ গবেষক

৫ আগস্টের পর আমাদের সবার মধ্যে ঐক্যের একটি বড় সুযোগ ছিল। ১৬ জুলাইয়ের আগপর্যন্ত আন্দোলনটা ছিল কোটা নিয়ে। ব্যাপারটা তো ছিল অনেকটা শেখ হাসিনার সিস্টেমের মধ্যে ঢুকে তার সুবিধা নিতে চাওয়া। আমলা হলে আমি টাকা পাব। আমার শ্রেণির বদল হবে। তখন পর্যন্ত আমরা আন্দোলন করিনি; কিন্তু আবু সাঈদের হত্যার পর সেই আন্দোলন আর কোটা আন্দোলনে থাকল না। আন্দোলনটা হাসিনার পতনের আন্দোলনের দিকে ঘুরে গেল, তুমি কেন খুন করলে? হাসিনাকে ফেলে দেওয়ার জন্য মানুষ প্রস্তুত ছিল। কোটা আন্দোলনে না হয়ে অন্য কোনো আন্দোলনেও ঘটনাটা ঘটতে পারত।

আন্দোলনের সময় দেখেনি, আমার পাশের লোকটা কে? তার পরিচয় কী? তার রাজনীতি কী? তার লিঙ্গ কী? সে আন্দোলনে এসেছে এবং পাশের লোকটার সঙ্গে এক হয়ে গেছে। সেই যে উচ্চ মুহূর্তটা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। তখন চাইলে অনেক কিছুই করতে পারতাম; কিন্তু আমরা তা করিনি। হাসিনার পুরো সিস্টেমকে আমরা রেখে দিয়েছি। ফলে দুর্নীতি কেন কমবে? সিস্টেমটা তো রয়েই গেছে। নানা মানুষকে মামলা দেওয়া হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, হাসিনার আইনে এবং একই সিস্টেমে। হাজার হাজার ভিত্তিহীন মামলা দেওয়া হচ্ছে।

আন্দোলনে যারা নেমেছে, তাদের প্রত্যেকেরই তো রাজনৈতিক এজেন্ডা ছিল। সেসব এজেন্ডা যে বের হয়ে আসছে, এটা খুবই স্বাভাবিক। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ডানপন্থী যারা ক্ষমতায় আসতে চায়, তাদের কথা বাদই দিলাম; যারা গণতন্ত্রকে পছন্দ করে না, তারাও এখন কথা বলতে শুরু করেছে। তারাও এখন বলছে—না, গণতন্ত্র চলবে না; আপনি যদি গণতন্ত্র মানেন, তাহলে আপনার নামাজ–রোজা কিছুই হবে না। আমার সঙ্গে তোমার চিন্তার তফাত আছে। ফলে আমার তোমার বিরুদ্ধে নামতে হবে। এসব আলাপের যে মুখ খুলে গেছে, এটা খুবই ভয়ংকর জিনিস। তারা বাংলাদেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ওরা বুঝতেই চায় না যে সেটি তো সম্ভব নয়। কারণ, এ দেশে ইসলামচর্চার অনেক রকমের ধারা আছে।

ইন্দোনেশিয়া বা মালয়েশিয়ার মুসলমানদের দিকে তাকালে আমরা দেখব, সেখানে তারা এসব প্রশ্ন সামলেই এগিয়েছে। আমাদের দেশে রাজনৈতিক সালাফিবাদের উত্থান ব্যাপারটাকে বিপজ্জনক দিকে নিয়ে গেছে। তারা ভাবার জন্য কোনো পরিসর
রাখছে না।

এই আন্দোলন নিয়ে দুই হাজারের মতো মামলা হয়েছে। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সরকার এসেছে আনুমানিক ১ হাজার ৪০০ মানুষের রক্তের ওপর দিয়ে। অথচ বিচারিক প্রক্রিয়ার কোনো উন্নতি দেখলাম না।

আন্দোলনে যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই রিকশাওয়ালা আর পোশাককর্মী। এই যে যাঁরা ক্ষমতায় গেলেন, তাঁরা কিন্তু এই মানুষগুলোকে দেখেননি; এই মানুষগুলোর কাছে যাননি। হাসপাতালে একজন আহত আমাকে বলেন, ‘আমরা তো ওদের ডাকে চলে এসেছি, ওরা তো আমাদের ডাকে আসছে না।’ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল লোকদের ঠিকভাবে সাহায্য দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের কি কোনো সুস্পষ্ট হিসাব আছে যে এতজন আহত হাত, এতজন পা, এতজন চোখ হারিয়েছেন? এই সরকার তো তাঁদের রক্তের ওপর পাড়া দিয়ে ক্ষমতায় গেছে। তাঁরা এর হিসাব নেবেন না?

আহত ব্যক্তিদের অনেকে ট্রমায় ভুগছেন। অথচ তাঁদের নিয়ে কেউ কথা বলছেন না; কেউ কাজ করছেন না। যাঁরা নিজেদের আন্দোলনের নেতা বলে দাবি করেন, তাঁরা কি কেউ তাঁদের কাছে গেছেন? তাঁরা তো তাঁদের রাজনীতিতে মশগুল হয়ে গেছেন এবং আহত ব্যক্তিদের বিক্রি করেছেন। মুখের মধ্যে শটগান দিয়ে গুলি করে খোকনচন্দ্র নামের একটি ছেলের মুখ ‘নাই’ করে দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা ওই ছেলেটিকে নানা অনুষ্ঠানে নিয়ে গেছেন, কিন্তু তাঁর চিকিৎসা হয়নি। যেদিন বার্ন ইউনিট বলল, তাদের আর চিকিৎসা নেই, তারও চার মাস পর তাঁকে রাশিয়ায় নেওয়া হয়েছে। এত দিন তো লাগার কথা নয়। তাঁকেও আপনারা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মধ্যে ফেলে দিলেন?

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, মাজারের ওপরে হামলা—এসব নিয়েও তাঁরা তখনো কথা বলেননি, এখনো বলছেন  না।

নাজিফা জান্নাত

নাজিফা জান্নাত
নাজিফা জান্নাতজুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সাবেক সমন্বয়কারী

মামদূহ ভাই ১৬ তারিখে আবু সাঈদ মারা যাওয়ার পর আন্দোলন নতুন মোড় নেওয়ার কথা বললেন। আমি বহু আগে থেকেই কোটা আন্দোলনে অংশ নিচ্ছিলাম। আবু সাঈদের ভিডিওটা আমি ৫০–৬০ বার দেখেছি। আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। এর ভেতরেও আমি ফোন ধরে বলছি, মাইকটা এখানে আনো। এ কাজটা করো।’ আমাদের বসে থাকার কোনো সুযোগ ছিল না। ১৯ জুলাইয়ের পরে ‘ডু অর ডাই’ পরিস্থিতি হয়ে গেল।

১৮ জুলাই আমার ডাকেই আমাদের পাশের ইম্পিরিয়াল কলেজের ছাত্র এসেছে। সে মারা গেল। আমার সামনে দিয়ে ওর লাশ নিয়ে যাওয়া হলো। এরপর যখন কারফিউ দেওয়া হলো, আমার খুব অসহায় লাগছিল। নির্বাচনের পরপর যে রকম অসহায় বোধ হচ্ছিল, সে রকম। ১৯ তারিখের পর কারফিউ ভেঙে আবার আমরা পথে নামলাম। আমার তখন অনেক ঝুঁকি, কখন এসে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়! রাত জেগে বসে আছি। ঘুমাতে পারছি না। এমন একটি পরিস্থিতি যে আর ভয় পাই না। ধরে নিয়ে গেলে ধরে নিয়ে যাবে। মেরে ফেললে মেরে ফেলবে; কিন্তু যা কর্মসূচি চলছে, সেটি থেকে আর পিছু হটব না।

আমি একজন শিক্ষার্থী। আমাদের কাছে সর্বোচ্চ কী ছিল? একটি ইট বা লাঠি। এর বিপরীতে তো রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড, আসল বুলেট। একটি অসম লড়াই। ফলে পিছিয়ে যাওয়ার আর কোনো উপায় ছিল না। সরকার পড়ে গেলে রাষ্ট্র পাল্টে যাবে। জাদুবাস্তবতার মধ্য দিয়ে সব পাল্টে যাবে, এ রকম মাথায় কিছু ছিল না। নয়া বন্দোবস্ত বা জন–আকাঙ্ক্ষা—এসব কথা এসেছে ৫ আগস্টের পর।

আমরা কেউ এ অবস্থার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। শেখ হাসিনার পতনের কথা ৫ আগস্টের আগে নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারতেন না। সরকার গঠনের প্রক্রিয়া আমি কাছ থেকে দেখেছি। কারও কাছেই আসলে কোনো তথ্য ছিল না। এখন অনেক কিছু পাল্টে ফেলার অনেক আলাপ আসছে। তখন এসব ব্যাপারে কারও কোনো ক্লু ছিল না।

সলিমুল্লাহ খান

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খানলেখক ও জনবুদ্ধিজীবী

গত এক বছরে আমরা যা আশা করেছিলাম, সেগুলো পূরণ হয়নি। অনেক সমস্যা আছে। আমি বলব, এগুলো উপসর্গ বা আলামত। দক্ষিণপন্থী শক্তির উত্থান অথবা সরকারের অব্যবস্থাপনা ইত্যাদি যেসব উপসর্গের কথা জাহেদ বললেন, তা আমরা দেখছি, বিশ্লেষণ করার চেষ্টা খুব বেশি করিনি।

আমরা এখন যে বড় বা ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর কথা বলছি, তাদের কর্মসূচি কী? বিএনপির একটি কর্মসূচি আছে ৩১ দফা। দফা ৩১টি হলে সেটি আর কোনো দফা থাকে না। সব রকম পরিকল্পনার মূলকথা হচ্ছে অগ্রাধিকার।

ধরেন, জুলাই ঘোষণা দেব। সরকার দেওয়ার আগে তো আপনার নিজেদেরই তো সেটি দেওয়া উচিত ছিল। সে জন্য আপনি কনভেনশন ডাকবেন, যা করার করবেন। ৫ আগস্টের পর প্রায় এক বছর গেল। জুলাইয়ের আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিতে চেয়েছিলেন। ‘সরকার বলল, না আমরা দেব, তোমরা অপেক্ষা করো।’ এটা দুর্বলতা।

এখন বড় কিছু লক্ষণ দেখুন। স্বৈরাচার হাসিনা সরে যাক, এটা সবাই চেয়েছেন। হাসিনা কি সরে গিয়েছে? হাসিনার চেহারাটা সরে গেছে; কিন্তু হাসিনার লোকেরা তো সবাই ফিরে আসছে। তারা কেউ জাতীয় পার্টির ভেতরে, কেউ বিএনপির ভেতরে, কেউ এনসিপির ভেতরে ঢুকছে। শুধু তা–ই নয়, আওয়ামী লীগের নামে মিছিলও হচ্ছে। আমাদের বোঝা দরকার, কেন এটা সম্ভব হচ্ছে। গত এক বছরে ইউনূস সরকারের অনেক সাফল্য আছে। তিনি সাফল্যের সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের পাওনা মওকুফ করে দিতে পেরেছেন। তো এই যে আমাদের সবার সংকীর্ণতা, নিজের নিজের স্বার্থচিন্তা, এর পরিণতি যা হওয়ার তা–ই হয়েছে।

কথা আসছে যে সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক উচ্চকক্ষ লাগবে। মনে হচ্ছে, এটাই বাংলাদেশের সব সমস্যার সমাধান। আমাদের ইউনিটারি সিস্টেম অব গভর্নমেন্টের কী দরকার? সেখানে অনির্বাচিত মেধাবী লোকদের নিয়ে আসার একটি হিডেন এজেন্ডা দেখতে পাই। কাঙালের কথা বাসি হলে ফলে। আমি মনে করি, আমাদের উচ্চকক্ষের দরকারই নেই। উচ্চকক্ষ স্বৈরাচার ঠেকাতে পারবে না। সবার ধারণা হয়েছিল, প্রেসিডেন্টের শাসনপদ্ধতিই আমাদের একনায়কতন্ত্রের উৎস। ১৯৯১ সালে আমরা পুরোনো মন্ত্রিপরিষদ–শাসিত সরকারপদ্ধতিতে ফিরে গেলাম। কিন্তু তাতে কি স্বৈরতন্ত্রের অবসান হলো? আমাদের প্রধান সমস্যা স্বৈরতন্ত্র। তো এই উপসর্গটির তলায় কী আছে? আমাদের দেশে পুঁজির যে আদিম সঞ্চয়ন চলছে, সেটিই এর একটি উৎস।

দুর্নীতি বা ধর্মীয় সহিংসতার পুনরুত্থান দমাতে হলে একটি শক্ত সরকার দরকার। সরকার শক্ত হয়, যখন তার পেছনে জনসমর্থন থাকে। নির্বাচন জনসমর্থনের একটি পথ। আমি নির্বাচনের পক্ষে। নির্বাচন দিয়েই আমাদের এগোতে হবে; কিন্তু সবকিছু নির্বাচনসর্বস্ব মনে করার বিপদ আছে। আমাদের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি তার থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না।

সংস্কার কথাটা এখন খুব জনপ্রিয়। প্রশ্ন হলো, আমরা কি সংস্কার চাই? রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশন বসছে। এ আলোচনা মোটের ওপর নিষ্ফল হতে বাধ্য। কারণ, সংবিধান সংস্কারসহ ছয়টি কমিশনের রিপোর্ট পড়ে আমি হতাশ। মূল সমস্যা বোঝার কোনো চেষ্টা নেই, শুধু লক্ষণ নিয়ে টানাটানি করছি। আমাদের সমস্যা হচ্ছে, সরকার যেন স্বৈরাচারী হয়ে না উঠতে পারে। এটিকে কার্যকর প্রতিরোধের পথ হচ্ছে, জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা। শুধু সংসদ নির্বাচনে বা স্থানীয় সরকারে নয়, সর্বত্র।

স্বৈরাচারের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করা দরকার। আমাদের বর্তমান দুর্গতির একটি বড় কারণ একাত্তরের যুদ্ধপরাধীদের বিচার যথাসময়ে না করা। এক অংশকে বিচার করা হয়, বিচারাধীন অনেকে মুক্তি পায়, অনেককে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। পরে এটা রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। হাসিনা স্বৈরাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের প্রক্রিয়া যদি সম্পূর্ণ করা হতো, একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হতো। এর সঙ্গে অজস্র লোককে মামলায় জড়িয়ে বিচারটাকে খেলো করে তোলা হয়েছে। হাসিনার সময় নেহাত টিকে থাকার খাতিরে অনেকে স্লোগান দিয়েছে। তাদের অপরাধের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনার মতো আহ্বান জানিয়ে মাফ করে দেওয়া উচিত।

আর আমলারা তো তাঁদের জায়গায় বসে আছেন। এই একটি বছর সরকার অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। এই সরকারের বুদ্ধির মধ্যে আমি কিছু অপবুদ্ধিও দেখি। কেন ৮ আগস্টকে নতুন বাংলাদেশ দিবস ঘোষণার চেষ্টা হবে। বোঝা যায়, থলের মধ্যে বিড়াল আছে। এই সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের দুর্বলতা হচ্ছে যে এটি প্রতিনিধিত্বমূলক হয়নি। তারপরও ইউনূসের ওপর এখনো মানুষের আস্থা আছে। আমরা এ পর্যন্ত ইউনূসের ব্যাপক বিরোধিতা করিনি। না করার কারণ, দেশটি যাতে একটি শৃঙ্খলায় ফেরে।

নির্বাচনের প্রশ্ন তো সবারই আছে। কথা হলো নির্বাচনের আগে ইউনূস সরকার কেন নূ৵নতম একটি সংস্কার ঘোষণা করতে পারছে না? ঐকমত্য কমিশন কেন লাগবে এখানে? বহু বিষয় নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য তো আছেই। আমাদের কোনো একদলীয় সরকার হবে না। ছাত্রছাত্রীরা কেন প্রাণ দিয়েছিল? যদি বলি কোটার সুবিধার জন্য, তাহলে খুব সংকীর্ণ ব্যাখ্যা হয়েছে। নাজিফা জান্নাতের কথার তাত্ত্বিক বক্তব্য হচ্ছে, এটা মৌলিক অধিকারের সঙ্গে জড়িত। বিশেষ ক্ষমতা আইন থাকবে কি না, র্যাব থাকবে কি না, ডিজিএফআই অকারণে হস্তক্ষেপ করবে কি না, এসব বন্ধ করার সংবিধানে মৌলিক অধিকার রক্ষার মূলে আছে এগুলো। গ্যারান্টি দিতে হবে যে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হবে না। সংবিধানে পরিষ্কার লেখা আছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। উচ্চ আদালত তো সেটি করেননি। এসবের বিহিত হওয়া দরকার।

জাহেদ উর রহমান

আমার কাছে চীনা সংবিধানের ৩৫ নম্বর অনুচ্ছেদটি খুবই আকর্ষণীয় লাগে। সেখানে মতপ্রকাশ এবং সমাবেশের শর্তহীন স্বাধীনতা দেওয়া আছে; কিন্তু এর ফল আমরা জানি। লিখতে হবে না তা বলছি না; কিন্তু লিখে দিলেই সব হয় না। বিপ্লব যখন হয়, তখন সুনির্দিষ্ট কতকগুলো রাজনৈতিক লক্ষ্য সামনে রেখে সবাই একত্র হন, সংগঠন তৈরি করেন, কর্মসূচি দেন। নাজিফা কিন্তু বলছেন, তাঁদের মাথায় তখন এ ধরনের কোনো চিন্তাই ছিল না। প্রত্যাশা পরে তৈরি হয়েছে, তৈরি করা হয়েছে। হয় আমরা মরব, নয় শেখ হাসিনা যাবে। শেখ হাসিনার পতনের পর আমারও প্রথম অনুভূতি হয়েছিল, বেঁচে গেলাম।

আমি একটু খোলাখুলিই বলি। কোটা আন্দোলন সরকারি চাকরির আন্দোলন। বিসিএস কেন আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে? সরকারি চাকরির আভিজাত্য আছে, সামাজিক মর্যাদা আছে, কথিত ও অকথিত বিস্তর সুযোগ–সুবিধা আছে। যাঁরা আন্দোলনে গিয়েছিলেন, তাঁদের একটি বড় অংশ দেশটিকে গড়ে তুলবেন, এই আশা নিয়ে তো যাননি। সেই তুলনায় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ তো অনেক বড়। তাঁরা কিছু পাবেন বলে যাননি।

হাসিনার পতনই কি আন্দোলনের একমাত্র প্রাপ্তি কি না, এই কথাটার মধ্যে বিষয়টিকে ছোট করে দেখা হয়। এটি অনেক বড় ব্যাপার। এখন আমরা ক্রমাগত যতগুলো ভালো নির্বাচন করে যেতে পারি, ততই আমাদের গণতন্ত্র পরিগঠিত হতে থাকবে। শেখ হাসিনা চলে গেছে। এখন যদি কিছু ঐকমত্য হয়, পরপর চারটি সুষ্ঠু নির্বাচন আমরা করতে পারি, আমি অত্যন্ত খুশি।

মীর হুযাইফা আল মামদূহ 

হাসিনার পতন একটি বড় অর্জন বলেই আমার কাছে মনে হয়। কারণ, সেটি আমাদের জন্য একটি জরুরি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নির্বাচন যদি গণতন্ত্রের প্রথম ধাপ হয়, তাহলে সেটিকে নষ্ট করে হাসিনা সব স্বৈরতন্ত্র এবং ঝামেলার ভিত্তি তৈরি করেছে। এরপর ক্ষমতা রক্ষার জন্য গুম, খুন যা যা করা যায়, সব করেছে। ফলে হাসিনাকে ফেলা খুব বড় একটি ব্যাপার ছিল। আমি আশা করি, ফেব্রুয়ারিতে ভালো একটি নির্বাচন হবে। আমরা এমন একটি দেশ চাই, যেখানে কোনো ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ—কোনো পরিচয় দিয়ে আমাদের বিচার করা হবে না। আমি চাই, সামনের দিনে শাপলা আর শাহবাগ এক হতে না পারুক, একসঙ্গে বসে সংলাপ করুক।

নাজিফা জান্নাত 

আমাদের প্রত্যাশাগুলো কে পূরণ করবেন, সেই বাস্তবতা তো দেখতে পাচ্ছি না। আমাদের সরকার আরও দক্ষ হওয়া দরকার। রাজনৈতিক দলগুলোকে জনবান্ধব হওয়া জরুরি। গত কয়েক মাসের অভিজ্ঞতায় দেখলাম, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো খুবই জনবিচ্ছিন্ন। তাদের কথাবার্তা, বোঝাপড়া সবই মুখস্থ, তবে জনবান্ধব নীতি প্রণয়নে প্রচণ্ড ঘাটতি আছে।

আমাদের প্রজন্ম একটি আন্দোলন করেছি। এরপর অনেক ভুলত্রুটি এবং নৈতিক বিচ্যুতিও ঘটেছে। কেউ কেউ অনৈতিকভাবে টাকাপয়সার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এত বড় ঘটনার পর সব শ্রেণি–পেশার মানুষের যে মানসিক উত্তরণ ঘটেছে, সেটিকে পরিকল্পিত খাতে প্রবাহিত করার সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এর জন্য রাজনৈতিক পরিকল্পনা দরকার।

সলিমুল্লাহ খান

অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি না? নির্বাচনটা কেমন হবে? আমরা চাই, ভালোমতো নির্বাচন হোক। তবে নির্বাচনই তো শেষ কথা নয়। আমরা কী নিয়ে সামনের দিকে যাব?

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে ভুল–বোঝাবুঝি আছে। এটা দূর করা দরকার। কিছু ছেলেমেয়ে নিজের স্বার্থে বিসিএস পরীক্ষার জন্য আন্দোলন করেছে, সেটি আংশিক ব্যাখ্যা, ফলে অর্ধসত্য। কোটা দিয়ে তাদের মৌলিক অধিকারে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছিল। বিষয়টাকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করা হয়েছিল। এটা নাগরিকের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।

শেখ সাহেব নির্বাচনে জিতেছিলেন কী দিয়ে? তিনি ছয় দফার ম্যান্ডেট নিয়েছিলেন কী জন্য? মানুষ জানত যে পশ্চিম পাকিস্তান আমাদের শোষণ করছে। এই শোষণ বন্ধ হলে জীবনযাত্রার মান ভালো হবে। এখন আমরা মানুষের সামনে কোন আশাবাদ
তুলে ধরছি। আমি বলব, এনসিপির তরুণ নেতারাও এ পর্যন্ত সে রকম কোনো এজেন্ডা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধা কোটার রাজনীতি করছিলেন। জুলাই শহীদের রাজনীতি আমরা কয় বছর নিয়ে যাব, কে জানে! আমাদের একটা বাস্তব কর্মসূচি দরকার। এই চ্যালেঞ্জ সরকারের আছে। আমাদের সবার আছে।

প্রথম আলো,